প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ ছেড়ে দিতে হবে-এটা মানতে না পেরে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থ বন্ধ করতে কাজ করেন ড. ইউনূস।
মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেলে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে দুই থানা উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু। আপনারা জানেন, আমাদের দেশের একজন বিশ্বখ্যাত মানুষ হলেও একটা ব্যাংকের এমডি পদ তার বয়সের কারণে ছেড়ে দিতে হচ্ছে সেটা তিনি মানতে পারেননি। একদিকে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে দুই-দুটা মামলা করে হেরে গেছে, পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে তদবির করে—যেভাবেই হোক আমাদের পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আমাদের ওপর নিয়ে আসে। যখন দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে না তখন বলে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র ছিল। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম এবং সেই থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, কাজে পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় এবং একটি মামলাও করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কানাডা আদালতে, সেই আদালতের রায়ে স্পষ্টভাবে কোর্ট বলে দেয়—এখানো কোনো দুর্নীতি তো হয়নি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেসব অভিযোগ করেছে সেগুলো সব ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। এই কথার পরে তো আর কোনো কথা থাকে না, কিন্তু তারপর যারা আমাদের বদনাম দিয়েছে তাদের টাকায় আমি পদ্মা সেতু করবো না এটাই আমার সিদ্ধান্ত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর রহমতে সম্পূর্ণ বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। এই পদ্মা সেতু রক্ষণা-বেক্ষণ, যারা যাবে তাদের নিরাপত্তা বিধান এটাও আমাদের কর্তব্য। কাজে পদ্মা সেতুকে সুরক্ষিত করা এবং যাত্রী সেবা দেওয়া বা আশে পাশে যে জনগণ তাদেরও সেবা দেওয়া আমাদের কর্তব্য সে জন্য আমরা দুটি থানা; জাজিরায় পদ্মা সেতু দক্ষিণ আর মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু উত্তর—এই দুটি থানার আধুনিক ভবন সম্পন্ন করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় মঙ্গলবার (২১ জুন) থেকে দুই পাড়ে চারতলা ভবনবিশিষ্ট দুটি নতুন থানার যাত্রা শুরু হচ্ছে। সেতু উদ্বোধনের আগেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে থানা দুটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করে থানা দুটিতে জনবলও পদায়ন করা হয়েছে।
সেতুর দুই প্রান্তের প্রবেশমুখে গড়ে তোলা নান্দনিক চারতলা থানা ভবন শুধু যোগাযোগই নয়, সেতু ঘিরে বদলে যাওয়া এলাকার নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দুটি থানা মূলত সেতুর নিরাপত্তা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষের আইনি সহায়তার জন্য কাজ করবে।
প্রতিটি থানায় একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন।
সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে ‘পদ্মা দক্ষিণ থানার’ আওতায় পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। আর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ‘পদ্মা উত্তর থানার’ আওতায় থাকছে মেদিনীমণ্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়ন। নতুন এ দুই থানা নিয়ে সারা দেশে মোট ৬৬৪টি থানা হলো। নতুন এ দুটি থানা উদ্বোধনে খুশি এলাকাবাসী এবং দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ সদস্যরা।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটি রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি সড়ক যোগাগোগ স্থাপন করবে।
রাজশাহীর সময়/এএইচ