বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার, চিকিৎসা, ত্রাণ সহায়তা প্রদানে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘মানুষ যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
রোববার (১৯ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘সাফ চ্যাম্পিয়ন-২০২১ বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ নারী জাতীয় ফুটবল দল’-এর সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বর্ষাকাল, বিশেষ করে আমাদের সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলায় এবারের বন্যাটা একটু ব্যাপকহারে এসেছে। আমি প্রতিনিয়ত সব খবর রাখছি।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ত্রাণ এবং উদ্ধারের সব কাজ করছি। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে আমাদের সব প্রতিষ্ঠান মানুষকে উদ্ধারও তাদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ায় নিয়োজিত রয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের দলের যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী বিভিন্ন এলাকায় সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
বন্যার পানি নিষ্কাশনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য যা যা করণীয় সেটাও আমরা করে যাচ্ছি। পানি নেমে গেলে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘এবার বড় বন্যা আসতে পারে এটা আগে থেকে বলেছিলাম, সবাইকে সতর্ক করেছি, প্রস্তুতি নিতে বলেছিলাম এবং আমাদের সে প্রস্তুতি আছে।
উত্তরের বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যাঞ্চল এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার সম্ভবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা শুরু হয়ে গেছে। বন্যা কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে।
তিনি বলেন, ‘পানি নামতে শুরু করেছে, সুনামগঞ্জ থেকে পানি যখন নামবে, তখন অন্যান্য এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এটা আমাদের প্রাকৃতিক নিয়ম। বিশেষ করে রংপুর বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগে বন্যার সম্ভাবনা আছে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
‘এই পানি যখন নামবে মধ্যাঞ্চল যখন প্লাবিত হবে ঠিক শ্রাবণ মাস শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত আবার দক্ষিণ অঞ্চল প্লাবিত হবে। দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি আমরা দেখি, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা, এভাবে মাঝেমধ্যে বন্যা প্লাবিত করে।
দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচা বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, এটাই প্রকৃতির খেলা, এটা নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যবস্থা নিতে পারি, আবার সেই সঙ্গে মানুষের জীবনও তো চলতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের চলতে হবে। কাজেই একদিকে যেমন আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করব, পাশাপাশি জীবনযাত্রাও যাতে চলে এসে ব্যবস্থা আমরা রাখব। ’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের ৩৩ জন সদস্যসহ মোট ৮৮ জন ক্রীড়াবিদকে সম্মাননা দেওয়া হয়। সাফ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের বাইরে ৫৫ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ ২০২০-এর ৩৩ জন এবং বঙ্গবন্ধু ৪-জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২২-এর বিজয়ী ২২ জন খেলোয়াড় রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন মারিয়া মান্দা, খেলোয়াড় মনিকা চাকমা এবং প্রধান প্রশিক্ষক গোলাম রব্বানী ছোটন, বাংলাদেশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ফয়সাল খান এবং বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন জামাল ভূঁইয়ার হাতে আর্থিক সম্মানির চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তিন শ্রেণির ক্রীড়া দলের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি (বাফুফে) কাজী মো. সালাহউদ্দিন, মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দা এবং বাংলাদেশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ফয়সাল খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.নজরুল ইসলাম।