বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত পানীয় হলো চা। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন উপাদান শরীরকে দ্রুত সতেজ রাখে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি এই পানীয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
চা বলতে সচরাচর সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট একধরনের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা চা পাতা পানিতে ফুটিয়ে বা গরম পানিতে ভিজিয়ে তৈরি করা হয়।
মূলত মৌসুমি অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির ফসল এটি। একপ্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষের পাতা শুকিয়ে চা প্রস্তুত করা হয়। চীন দেশকেই চায়ের আদি জন্মভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পানীয়রূপে পরিচিত।
প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন - কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা। এ ছাড়া সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরও বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে।
তবে সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত চা হলো সাদা, সবুজ, উলং এবং কালো চা। প্রায় সবরকম চা-ই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি হলেও বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুতের কারণে একেক ধরনের চা এক এক রকম স্বাদযুক্ত।
বিভিন্ন ধরনের চা ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীন বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু করে। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলাদেশে এই হাওয়া বইতে শুরু করে ১৮৪০ সালে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে। তবে ১৮৪৭ সালে সর্বপ্রথম সিলেটের মালনীছড়ায় চা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা শুরু হয়।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চা বাগানগুলো প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই শিল্পকে টেকসই খাতের ওপর দাঁড় করানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেন।
সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের নামটি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। চায়ের বাজার বিশ্বে প্রসারিত করতে বাংলাদেশে একে একে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ চা বোর্ড এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট।
অনুকূল পরিবেশ, সরকারি প্রণোদনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চা বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিংয়ে সর্বশেষ ২০২১ সালে দেশের চায়ের উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি।
বাংলাদেশে বেশি রফতানি হওয়া অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা অন্যতম। দেশে উৎপাদিত চায়ের গুণগতমান উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ চা চাষের অনুকূল থাকায় বাংলাদেশের চা শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত আশার আলো সঞ্চার করছে।
সূত্র: বাংলাদেশ চা বোর্ড