মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এতে হাসপাতালটিকে সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৫ মে) দুপুরের দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) দীপন দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিয়া অর্ণব হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন।
কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন:হাসপাতালটির সিকিউরিটি গার্ড আজিজুর রহমান ও আব্দুল করিম। এই দুইজনকে এক মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের কর্মচারী পারভীন আক্তার, ফাতেমা আক্তার, সুমি আক্তার, শিল্পী আক্তার,আব্দুল বাতেন, মনির হোসেন ও হাসপাতালের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের স্ত্রী মান্না তানিয়াকে ১৫ দিন করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক নামের প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন না থাকার পরও কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। গত শনিবার (২১ মে) রাত ১১ টার দিকে প্রসব বেদনা নিয়ে সাবিনা আক্তার নামে এক নারী হাসপাতালটি ভর্তি হন। পরে রাত ৩ টার দিকে ভুয়া গাইনী চিকিৎসক ডা. ইমা বিনতে ইউনুছ ওই নারীর অস্ত্রোপচার করেন । এ সময় সাবিনা আক্তার একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু মারা যান সাবিনা।
মারা যাওয়া সাবিনার পরিবারের অভিযোগ, ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে এবং রক্তক্ষরণে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেই সাবিনার মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সাবিনাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর বিষয়টি আপোষ-মিমাংসার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় দেনদরবার হয়। এক পর্যায়ে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। কিন্তু প্রসূতির মা-বাবা ও শশুর বাড়ির লোকজনের মধ্যে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এ ঘটনায় সোমবার (২৩ মে) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. ফারহানা নবিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
ডা. ফারহানা নবি বলেন, ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের নিকট তার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। তিনি তা দেখাতে পারেননি। সরকারি কাগজে কলমে সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে কোনো হাসপাতাল নেই। যিনি প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি কোনো ডিগ্রিধারি চিকিৎসক নন। এমনকি যে ডাক্তার অজ্ঞান করেছেন তারও কোনো ডিগ্রী নেই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিয়া অর্ণব বলেন, সিটি হাসপাতাল এণ্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে এর কোন সরকারি নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। তাই হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর সময়/এমজেড