প্রেমের সম্পর্ক করে ছবি ও ভিডিও ধারন করে ব্লাকমেইল করে ধর্ষণ করা এক সাইবার প্রতারক’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

বুধবার (১৮ মে) দিবাগত রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন আল মাদানী রোডের একটি প্যাশন টেইলার্সের ভিতরে অভিযান চালিয়ে প্রতারক মোঃ রিয়াজকে (২৮) গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতার মোঃ রিয়াজ প্রকাশ জুবায়ের চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার ( গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার ইদ্রিস কলোনী, দক্ষিণ শুলকবহর মহল্লা) চর কালাচাঁন এলাকার মোঃ সিরাজের ছেলে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন,  র‌্যাব-৭, চট্রগামের সিনিঃ সহকারী পরিচালক(মিডিয়া) , মোঃ নূরুল আবছার।

তিনি জানান, ভুক্তভোগী যুবতী একজন গার্মেন্টেস কর্মী। সে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম একটি অভিযোগ করেন। অভিাযোগে বরাত দিয়ে জানা যায়, মোঃ রিয়াজ প্রকাশ জুবায়ের (২৮) নামের একজন টেইর্লাস কর্মীর সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে তার দোকানে ভিকটিম তার ব্যবহিত সকল সেলাইয়ের কাজ করতো। 

এইভাবে সে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতারক মোঃ রিয়াজ যুবতীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এছাড়াও রাস্তাঘাটে ও কর্মস্থলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি করানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল অবলম্বন করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ভুক্তভোগী যুবতীর অফিস ছুটিকালীন সময়ে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যায়। 

গত ২ মাস পূর্বে হঠাৎ মোঃ রিয়াজ প্রকাশ জুবায়ের যুবতীর বর্তমান বাসায় যায় এবং সেখানে আলাপচারিতার একপর্যায়ে বাসায় নিরিবিলি পরিবেশ দেখে রিয়াজ ভিকটিমকে নগ্ন ছবি তুলার জন্য প্রস্তাব দেয়। সে তার প্রস্তাবে রাজি না হলে রিয়াজ প্রেমের সর্ম্পক ছিন্ন করবে বলে হুমকি দেয়। 

যুবতী প্রেমের সর্ম্পক টিকিয়ে রাখার জন্য নিরবতা পালন করলে সে সময় রিয়াজ তার মোবাইল দিয়ে ভিকটিমের অনেকগুলো নগ্ন ছবি তোলে। 

এরপর থেকে যুবতীর সাথে শারীরিক সর্ম্পক করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি না হলে প্রতারক রিয়াজ তার মোবাইলে থাকা নগ্ন ছবিগুলি ভিকটিমের অফিসের বিভিন্ন কর্মচারিদের দেখায়। এমনকি যুবতী যদি তার সাথে শারীরিক সর্ম্পক না করে, তাহলে রিয়াজ তার মোবাইলে থাকা নগ্ন ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। 

যুবতী রিয়াজের কু-প্রস্তাবে রাজি না হলে সে বলে সকল নগ্ন ছবি মুছে ফেলবো এজন্য ২০ হাজার টাকা দিতে হবে নইলে নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে ভাইরাল করে দিবে। 

যুবতী বাধ্য হয়ে বিকাশের মাধ্যমে রিয়াজ’কে ২০ হাজার দেয়। রিয়াজ টাকা পাওয়ার পর যুবতীর নগ্ন ছবি মুছে ফেলার কথা থাকলেও তা না করে সে পুনরায় শারীরিক সর্ম্পক করার জন্য চাপ দিতে থাকে। 

একপর্যায়ে তার নগ্ন ছবি রিয়াজের মোবাইল থেকে মুছে ফেলার জন্য তার সাথে মিশতে থাকে ও বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়।

এরপর রিয়াজ যুবতীকে ফুসলিয়ে জন্মদিন পালনের কথা বলে শহরের একটি হোটেলে নিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষন করে। এছাড়াও সে যুবতীকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ২বছর ধরে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছে। কিছু দিন যাবৎ  প্রতারক রিয়াজ যুবতীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ বিয়ে না করার জন্য এড়িয়ে চলতে শুরু করে। তখন যুবতী বাধ্য হয়ে রিয়াজের পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বলে। রিয়াজের পরিবার যুবতীকে কোনো প্রকার সাহায্য না করে অপমান অপদস্থ করে গভীর রাতে বাসা থেকে বের করে দেয়। 

এরুপ অভিযোগের বিষয়টি র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম মানবিকতার সহিত আমলে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল প্রতারক রিয়াজকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে বুধবার (১৮ মে) রাত আনুমানিক ১০টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন আল মাদানী রোডের একটি প্যাশন টেনলার্সের ভিতরে অভিযান চালিয়ে প্রতারক মোঃ রিয়াজকে (২৮) গ্রেফতার করে। 

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার প্রতারক রিয়াজ পেশায় একজন দর্জি যার কাছে বিভিন্ন নারীরা পোষাক তৈরির জন্য আসে এবং প্রয়োজনের তাগিদে তাদের মোবাইল নাম্বারসহ বিভিন্ন তথ্যাদি দর্জিকে প্রদান করতো। এছাড়াও রিয়াজ স্মার্টফোন ব্যবহারে দক্ষ হওয়াও অনলাইলে বিভিন্ন সাইটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার (হ্যাকিং সহ) সম্পর্কে জানা আছে তার। 

সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করে উঠতি বয়সি মেয়েদেরকে ফাঁদে ফেলে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো এবং পরে অনলাইনে ভিডিও কলিং/রেকর্ডিং সহ অন্যান্য পন্থায় তাদের থেকে ব্যক্তিগত মুহুর্তের বা অশ্লীল ভিডিও ক্লিপস নিজের কাছে নিতো। পরবর্তীতে সেই সকল ভিডিও ক্লিপস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির মাধ্যমে তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা সহ বিভিন্ন ভাবে ব্লাকমেইলিং করতো। 

প্রতারক রিয়াজ একজন বহুগামী পুরুষ যে একই সাথে বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক রাখতো এবং সম্পর্কের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত। 

ওই সকল নারীর অজান্তেই স্পর্শকাতর মূহুর্তের ভিডিও ও ছবি তুলে রাখতো পরবর্তীতে সেই নারীর সাথে আবারো সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য  ব্লাকমেইল করতো। 

রিয়াজের মোবাইল পরীক্ষা করে বিভিন্ন নারীর সাথে তার সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও তার মোবাইল পরীক্ষা করে ব্যক্তিগত মুহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তার মোবাইল দেখা যায় সে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ওই সকল  ভিডিও এবং বিভিন্ন নারীর নগ্ন ছবি বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক রিয়াজ সকল ঘটনার কথা স্বীকার করে। সে কৌশলে নারীদের এর সরলতার সুযোগে নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালসহ বিভিন্ন সময়ে হোয়াটসএ্যাপে ও ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত বলে জানা য়ায়।

এ ব্যপারে গ্রেফতার প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানায় র‌্যাবের এই মুখপাত্র।