টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মাদাইডাঙ্গা বিল পানিতে টইটুম্বুর। হাজার হেক্টরেরও বেশি আয়তনের এই বিলে আবাদ করা হয়েছে বোরো ধান। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাজারও কৃষক। বিলের পানি নিষ্কাশনে স্থায়ী ও টেকসই ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দাঁতভাঙ্গা ও শৌলমারী ইউনিয়নের বিশাল এলাকাজুড়ে মাদাইডাঙ্গা বিল। বিলটি এক ফসলি। এটি শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দির পুড়ারচর গ্রাম থেকে উত্তরে গোবরারগ্রাম পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রাম থেকে বংশীরচর গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রশস্ত। এখানে প্রায় দেড় হাজার কৃষকের এক হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ হেক্টর জমিতে সারাবছর পানি থাকে। বাকি প্রায় ৭শ’ হেক্টরেরও বেশি আয়তনের জমিতে বোরো চাষ হয়। তবে নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে ধান নষ্ট হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাদাইডাঙ্গা বিলের কিছু অংশে মাছের ঘের। বেশিরভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে বোরা ধান। বৃষ্টির পানিতে বিলের অনেক জায়গায় বোরো ক্ষেত ডুবে গেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ডুবন্ত ধান কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান জানান, বিলে তাদের ১০ বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে বোরো ধান ছাড়া অন্য ফসল চাষ করা যায় না। আবার বৃষ্টি হলে অনেক সময় ধান ঘরে তুলতে পারেন না, জমিতেই নষ্ট হয়ে যায়। এতে জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক সময় ধান ঘরে তুলতে পারলেও পানিতে নষ্ট হওয়ায় ফলন কম হয়।
গবরার গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম বলেন, ‘বিলে আমাদের সাত বিঘা জমি রয়েছে। প্রায় সারা বছর পানি জমে থাকে। জমিতে কেবল বোরো আবাদ হয়। কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে সে আবাদও নষ্ট হয়ে যায়।’
শৌলমারী ইউনিয়নের ঝগড়ারচর মাঝিপাড়া এলাকার কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ জানান, বিলটিতে তার তিন হেক্টর জমি বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে ডুবে থাকে। বিলের পানি নিষ্কাশন করতে পারলে শস্যাবর্তনের মাধ্যমে বছরে ২-৩ বার ফসল চাষ করা সম্ভব। পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের উদ্যোগ কামনা করেন তিনি।
মাদাইডাঙ্গা বিলে জমি আছে কৃষক কারু মিয়া, ময়েনউদ্দিন, শহিদুল ইসলাম, শাহালম, দীন মোহাম্মদ, রহিজ উদ্দিনসহ আব্দুর রহিম ও জাহিদুল ইসলামসহ অনেকের।
তাদের দাবি, বিলে বোরো চাষ করে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে বিপাকে পড়ছেন। ধান কাটার আগ মুহূর্তে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তাদের ফসল তোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিলে ওই বিলে অন্তত দুইবার ধান আবাদ করা সম্ভব। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি ধানের উৎপাদনও বাড়বে।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় যুগ যুগ ধরে জলাবদ্ধতায় অনাবাদি থেকে যাচ্ছে বিলের জমি। বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবেন।’
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিলটি এক ফসলি। তাও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে পারলে বোরো ও আমন দুই মৌসুমেই আবাদ করা সম্ভব হবে।’
পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই কাজ আমাদের দফতরের নয়, উপজেলা পরিষদের সেচ ও পুনর্বাসন কমিটি এসব কাজ করে থাকে। তবে ওই বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য বিশেষ প্রকল্প নিলে ভালো হয়। আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের সামনে তুলে ধরা হবে।’
রাজশাহীর সময়/এ