মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলছিল কিশোর অভিক দে (১৫)। ওই সময় তার বাবা-মা তাকে বলে “লেখা পড়া বাদ দিয়ে গেমস খেলছো কেন? এমন কথায় মা-বাবার ওপর অভিমান করে গত (১০ ডিসেম্বর ২০২১) বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে যায়নি কিশোর অভিক দে। সে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার ডাবুয়া এলাকার প্রভাস দের ছেলে।,
কিশোর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তারা মা-বাবা, আত্বীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে গত ১১ ডিসেম্বর ২০২১ তার মা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি করে। যার নং-৪৮৩। পরবর্তীতে ভিকটিমের মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে চকবাজার (সিএমপি) থানায় ৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা হয়। যার নং- ০৭, তারিখ- ২৬/০৩/২০২২, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ( সংশোধনী/২০০৩) এর ৭/৩০।
নিখোঁজ কিশোরের মা-বাবা তার ছেলেকে কোথায়ও খুঁজে না পেয়ে আত্বাহারা হয়ে নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় র্যাব-০৭, চট্টগ্রাম বরাবর চকবাজার (সিএমপি)থানার মামলা ও জিডির কপিসহ একটি আবেদন করে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিষয়টি গুরুত্বের সহিত আমলে নিয়ে নিখোঁজ ভিকটিম এবং এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম শুক্রবার (৬ মে ২০২২) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানাধীন নিউ চান্দঁগাও থানামোড় অভিযান পরিচালনা করে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সে গত ১০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ দুপুরে মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলছিল। তখন তার বাবা-মা তাকে বলে “লেখা পড়া বাদ দিয়ে গেমস খেলছো কেন? লেখাপড়া বাদ দিয়ে গেমস খোলার কারনে বাবা মা অভিক দে’কে শাসন করে। এক পর্যায়ে তার বাবা রাগের মাথায় বলে “তোমার রোজগার তুমি করে খাও” এই কথা শোনার পর ভিকটিম অভিক দে তার বাবা মার সাথে রাগ করে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ঘটনার দিনেই অভিক দে চট্টগ্রাম শহরের অলংকার এলাকার একটি রেষ্টুরেন্টে চাকরী নেয়। সেখানে ১ মাস ২২ দিন চাকরী করার পর সে। পরে চান্দগাঁও নতুন থানার মোড় এলাকার আরেকটি রেষ্টুরেন্টে চাকরী নেয়। সেখানে সে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ হতে কাজ করতে থাকে কাজের এক পর্যায়ে সেখানকার এক ষ্টাফের কথায় ক্ষুদ্ধ হয়ে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সে পুনরায় চান্দগাঁও নতুন থানার মোড় নিউ চান্দগাঁও রেষ্ট হাউজে চাকুরী নেয়। সেখানে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ হতে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত চাকরীতে কর্মরত ছিল।
উল্লেখ্য যে, নিখোঁজ ভিকটিম অভিক দে নিখোঁজ থাককালীন সকল জায়গায় তার আসল নাম পরিবর্তন করে নয়ন দে নামে পরিচয় দেয় এবং সে ইচ্ছে করেই বাবা মাকে তার অবস্থানের কথা বলেনি।
জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, নিখোঁজ ভিকটিম অভিক দে প্রাপ্ত বয়স্কদের একটা গ্রুপের সাথে চলাফেরা ছিলো। এই গ্রুপে অভিক দে অপহরন মামলার তিন আসামী হান্নান, লিও দাস, ও জয় নাম রয়েছে। হান্নান ইউরোপের পোল্যান্ড থাকে এবং জয় থাকে কাতারে। মূলত এরা বিশেষ করে যখন দেশে ছূটিতে থাকে তখন এ উশৃঙ্খল ও বিকৃত রুচির গ্রুপের কার্যক্রম বেড়ে যায়। নিখোঁজের সময় হান্নান ও জয় ছুটিতে ছিল। এ গ্রুপের সদস্যরা পরস্পর এডাল্ট ভিডিও শেয়ার করত ও ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছিল। পাবজি খেলার পাশাপাশি অভিক দে এসবে আসক্ত হয়ে পড়ে। সে গোপনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক একাউন্ট চালাত। এছাড়াও বেনামি ৫/৬ টি সিম ব্যবহার করত। পড়াশুনা প্রায় ছেড়ে দিয়ে সে সারাদিন এসব নিয়ে পড়ে থাকত বলে বাবা-মা কড়া শাসন শুরু করলে সে তার গ্রুপের অন্যান্য এডাল্টদের মত স্বাধীনতার খোঁজে বাড়ি হতে বের হয়ে যায়। তার হদিস কেউ যেন না পায় এজন্য সে তার ব্যবহৃত মোবাইল টিও রেখে যায়। কিন্তু পরে নয়ন দে নামে এক ছদ্মনামে ফেসবুক একাউন্ট খোলে। আত্নগোপণ থাকাকালীন সে নিজেকে নয়ন দে নামে পরিচয় দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম ঠিকানা দিয়ে অবস্থান করে।
উদ্ধারকৃত কিশোরকে আইনানুগ কার্যক্রমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানায় র্যাব।
রাজশাহীর সময় / জি আর