ঘরে নেই এক মুঠো চাল। গত কয়েক দিন মা জল ছাড়া আর কিছুই খায় নি। নিজেরও খাবার জোটে নি। কিন্তু নিজের কথা না ভেবে মায়ের কথা ভেবেছিল পাঁচ বছরের আরিয়ান রহমান। যে করেই হোক মায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে তাকে। তাই মাকে না জানিয়েই শহরে চলে আসে সে।
মায়ের জন্য চাল কেনার টাকা জোগাড় করতেই হবে তাকে। তাই সঙ্গে নিয়ে আসে শাক। সেই শাক বিক্রি করে যা পাওয়া যাবে তাই দিয়েই চাল কিনবে সে। বাংলাদেশের বাগেরহাট এলাকার পাঁচ বছরের সেই ছেলের কাহিনী এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়াতে। তার এই কথা শুনে জল এসেছে ওপার বাংলার অনেকেরই চোখে।
আরিয়ান জানায়, তার বাবা একজন মৎস্যজীবী। কিন্তু দাদুর বাড়ি থেকে তিন বছর আগে তাকে আর তার মাকে মেরে বের করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তারা থাকে দিদিমার বাড়িতে থাকে। তিনি আবার সৎ-দিদিমা। তিনি তাদের একদমই সহ্য করতে পারেন না। তার মা আমেনা আক্তার অসুস্থ। অসুস্থতা নিয়েই তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে ভাত নিয়ে আসে। কিন্তু কয়েকদিন কাজে যেতে পারেনি তিনি। তাই খাবারও জোটে নি।
সে দেখেছে যে শহরে রাস্তার পাশে শাক বিক্রি হয়। তাই গ্রামের একটি খালের পাশ থেকে শাক তুলে বিক্রির জন্য শহরে আসে সে। কিছু শাক বিক্রিও হয়। এদিকে সন্ধ্যা নেমে যাওয়ায় সে ঘুরতে থাকে রাস্তায়। বাগেরহাটের শালতলা এলাকার শহীদ মিনারের কাছে চলছিল বৈশাখী মেলা। সেখানে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে শিশুদের নাগরদোলায় চক্কর খেতে দেখেছে আরিয়ান। শাক বিক্রি করে ৮০ টাকা পেয়েছে সে। তাই দিয়েই ওই মেলা থেকে মায়ের জন্য একটি চামচ আর প্লাস্টিকের কৌটাও কেনে । কিন্তু টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় আর চাল কেনাই হয়নি।
বাগেরহাটের ভাটশালা গ্রামে থাকে আরিয়ান ও তার মা। ভাটশালা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিশুশ্রেণির ছাত্র আরিয়ান। সে জানিয়েছে, ঘরে চাল নেই, তাই এই ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তার। কারণ না হলে তাদেরকে না থাকতে হবে না খেয়েই। গ্রাম থেকে বেরিয়ে নদী পার হয়ে শাক বিক্রি করতে সে আসে হেঁটেই।
সে জানায়, তাঁদের ভাত খেতে লাগে না বিশেষ কিছুই। শুধুমাত্র নুন দিয়ে মাখিয়েই ভাত খেতে পারে সে। কিন্তু কী করে চাল কিনতে পারবে সেটাই তার একমাত্র চিন্তা।
রাজশাহীর সময় / এম আর