১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৯:০৬:০০ পূর্বাহ্ন


বিমান ভাড়া আরও কমানোর দাবি হজ নিবন্ধনে মিলছে না সাড়া
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১১-২০২৪
বিমান ভাড়া আরও কমানোর দাবি  হজ নিবন্ধনে মিলছে না সাড়া


২০২৫ সালের হজ পালনের লক্ষ্যে নিবন্ধন শুরু হলেও প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না যাত্রীদের। ইতোমধ্যে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা উল্লেখ করে সরকারি ও বেসরকারিভাবে একাধিক হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে খরচ খুব একটা কমানো হয়নি। এবারও পাঁচ লাখ টাকার নিচে হজে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হজ ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়। এ সময় অযৌক্তিক বিমান ভাড়া নির্ধারণ করে হজযাত্রীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করা হয়। এতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হাবের নেতার সিন্ডিকেট কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। হাসিনা সরকার পতন হলেও হজ ব্যবস্থাপনায় এখনো সেই সিন্ডিকেট বিদ্যমান।

হজ কার্যক্রম শুরুর দুই মাস পার হয়ে গেলেও শনিবার পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রাথমিক নিবন্ধন করেছে মাত্র ১১ হাজার ১০৮ জন হজযাত্রী। যদিও সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী হজের কোটা রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। এদিকে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকরা বিমানে ভাড়া আরও কমানোর দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এবার সরকারিভাবে হজের কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ১০ হাজার ১৯৮ জন। প্রয়োজনে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। আর বেসরকারিভাবে গাইডসহ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার জনের। কিন্তু নিবন্ধনের প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৩ হাজার ৭ জন। আর বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৮ হাজার ১০১ জন। এখনো প্রায় ৯০ শতাংশের মতো কোটা শূন্য রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হজ মুসলমানদের একটি ফরজ ইবাদত হলেও সেটি এখন ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্র হয়েও হজ ব্যবস্থাপনায় সরকারের কোনো সহায়তা নেই। উলটো অতিরিক্ত বিমান ভাড়া নির্ধারণ করে হজ প্যাকেজের খরচ বাড়ানো হয়। এতে একদিকে হজের খরচ বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইচ্ছে থাকলেও অর্থের অভাবে হজ পালন করতে পারেন না।

ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সির কতিপয় লোকের যোগসাজশে হজ পালন দিন দিন ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। এতে মুসলমানদের হজ পালন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে কয়েক বছর ধরে হজের কোটা পূরণ হচ্ছে না।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজ অনুবিভাগের উপসচিব মো. মতিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিগত কয়েক বছর অতিরিক্ত বিমান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এ কারণে এখন চাইলেও বেশি কমানো যাচ্ছে না। এবার প্যাকেজে যে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি আরও কমানো উচিত। হজযাত্রীদের সাড়া কম সম্পর্কে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে এবার হজ প্যাকেজের দাম গতবারের চেয়ে কমেছে। এরপরও সাড়া না মিললে আমাদের করার কিছু নেই।

বর্তমানে ওমরা পালন করতে গেলে ট্রানজিট বিমান ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইটে ৭৫-৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। যদিও ডলারের কারণে দাম কমে-বাড়ে। কিন্তু এবার হজের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজারের মতো। যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।

এই বিষয়ে কুতুব উদ্দিন নামে এক হজ এজেন্সির মালিক জানান, বিমান ভাড়া আরও কমিয়ে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। এটি দেড় লাখের মধ্যে করা উচিত। পাশাপাশি সব ধরনের বিমান সংস্থাকে হজের যাত্রী বহনের জন্য উন্মুক্ত করা দেওয়া হোক। এতে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। এতে প্যাকেজের খরচ অনেক কমে আসবে।

এদিকে বৈষাম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হজ ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এতে হজযাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত খরচ চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অনেক হজযাত্রী ইচ্ছে থাকলেও অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে হজ পালন করতে পারেননি। এবারও আগের মতো অতিরিক্ত বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটি কমিয়ে দেড় লাখ টাকার মধ্যে আনার আহ্বান জানান তারা।

এক্ষেত্রে সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে হজযাত্রীদের জন্য সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এতে যাত্রী বহনে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। বহনকারী সংস্থা বেশি হলে ভাড়া এমনিতেই কমে আসবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি-বেসরকারি দুই মাধ্যমেই হজ নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩০ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করে প্রাকনিবন্ধন করতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আর হজের প্যাকেজ ঘোষণা হলে বাকি টাকা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এ বছর যেসব এজেন্সি হজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে, তার তালিকা প্রাথমিকভাবে হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজের নিবন্ধন না করলে মিনা ও আরাফার ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়বেন হজযাত্রীরা। এরপরও হজযাত্রীর সাড়া মিলছে না।

এবার সরকারিভাবে দুই ধরনের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকায়। অপরটি সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকায়। যদিও এবার খাবারের টাকা যুক্ত করা হয়নি। এছাড়া একাধিক বেসরকারি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা থেকে শুরু।

গত হজ মৌসুমে অর্থাৎ ২০২৪ সালে সর্বনিম্ন সরকারি প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকার মতো। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন প্যাকেজে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খরচ বেড়ে যাওয়ায় গতবারও হজ কোটার প্রায় ৩৫ শতাংশ কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। হজযাত্রীদের অভিযোগ, হজের খরচ এত বেশি নির্ধারণ করা হয়, অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করেও ব্যয়বহুল হওয়ায় যেতে পারেন না। এ বছর এই প্যাকেজের খরচ কমিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সহজ করে দেওয়ার দাবি জানান তারা।