ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) বর্তমানে তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধের সম্মুখীন। প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস রুলস পরিবর্তনের প্রস্তাব ঘিরে মেধাভিত্তিক প্রমোশন পদ্ধতি বাতিলের চেষ্টা চলছে, যা কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিপিডিসিতে সার্ভিস রুলস পরিবর্তনের নামে সেই মেধাভিত্তিক পদোন্নতি ব্যবস্থা বাতিলের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে মেধাভিত্তিক প্রমোশন পদ্ধতি চালু রয়েছে, তবে কিছু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থে এই ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার পায়তারা করছেন।ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এর নেপথ্যে রযেছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুহেনা মোস্তফা কামাল। তিনি ২০২১ সাল থেকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার (নর্থ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ আওয়ামীলীগের আমল থেকে এখন পর্যন্ত আবু হেনার প্রভাবের কারণে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বে কোন কর্মকর্তারা এই পদে আসতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, আবু হেনা ও তার সহযোগীদের চাপে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়, যার লক্ষ্য সার্ভিস রুলস সংশোধন করা। এই কমিটিতে আবু হেনা নিজেই সদস্য হিসেবে আছেন এবং তার পছন্দের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে, শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোনো প্রতিনিধিকে এই কমিটিতে রাখা হয়নি, যা নিয়ে ব্যাপক আপত্তি উঠেছে। এমনকি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কর্মচারীকে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার জন্য বিশেষ এই অংশ চেষ্টা করছে। অস্থিশীলতা তৈরি করাই এদের মূল লক্ষ্য যা ডিপিডিসিতে এখন ওপেন সিক্রেট। সরকারকে অস্থিশীল করার উদ্দ্যেশে এই কমিটি কাজ করছে কিনা সে বিষয় খতিয়ে দেখারও দাবী জানান এই কর্মী।
তথ্য অনুযায়ী, এই কমিটি মেধাভিত্তিক প্রমোশন ব্যবস্থা বাতিল করে শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রমোশন দেওয়ার প্রস্ত্রাব দিয়েছে। আবু হেনা মেধাভিত্তিক প্রমোশন ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়ায় তিনি এই পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং নিজেই একটি জ্যেষ্ঠতা তালিকা তৈরি করে ভূতাপেক্ষ প্রমোশন পেতে মরিয়া হয়ে আছেন। শুধুমাত্র আবু হেনা চাচ্ছে না এজন্য ডিপিডিসির সকল পদে প্রমোশন স্থগিত হয়ে রয়েছে। চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকা সত্ত্বে কর্তৃপক্ষ আবু হেনার আপত্তির জন্য এ পদে প্রমোশন দিচ্ছেননা।
এছাড়াও, সাবেক ডেসা থেকে আগত কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দিয়ে নতুন জ্যেষ্ঠতা তৈরি করার প্রস্তাব রয়েছে, যা ডেসার বাইরে থেকে আসা কর্মীদের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করবে এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ তৈরি করবে। শুধু তাই নয় আইসিটি ক্যাডারের জেএম, আইসিটির পদোন্নতি কোটা ৪০% থেকে ৩৩% এ কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে যা সরকারি নিয়মে ৬০%। আইসিটি এমপ্লয়িদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
কমিটির বিভিন্ন বিতর্কিত প্রস্তাবনায় প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং পদোন্নতির বিষয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
২০১৭ সাল হতে পাওয়ার সেক্টরের সকল কোম্পানিতে ইউনিফাইড সার্ভিস রুলস কার্যকর রয়েছে। পাওয়ার সেক্টরের সকল কোম্পানিতে ইউনিফাইড সার্ভিস রুলস অপরিবর্তিত থাকলেও ডিপিডিসিতেই কেবল ইউনিফাইড সার্ভিস রুলস এবং মেধাভিত্তিক পদোন্নতি ব্যবস্থা পরিবর্তন করা নিয়ে তোড়জোড় চলছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কাদের স্বার্থে মেধাভিত্তিক পদোন্নতি পরিবর্তন করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেননা ডিপিডিসিতে এ ধরনের বিতর্কিত বিষয় চালু হলে পুরো পাওয়ার সেক্টরে এই বিতর্কের প্রভাব ছডিয়ে পড়তে পারে এবং তা সাম্প্র্রতিক পল্লী বিদ্যুত কান্ড থেকেও আরও বড় সমস্যার রূপ নিতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও চীফ ইঞ্জিনিয়ার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবুহেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আমি নিজেও তিনবছর প্রমোশন পাইনি। প্রমোশন দেওয়ার দায়িত্ব আমার না। মেধাভিত্তিক পদোন্নতি বাতিলের চেষ্টার বিষয়ে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি ওই কমিটির সদস্য মাত্রা।
তবে ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, সেই অর্থে ব্যাপারটা ঠিক না। নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটা নির্দেশনা আসছে। যে সংশোধন,পরিবর্তন, পরিবর্ধনের প্রয়োজন হয় সেটা প্রপোজ কর। এটা করার জন্য আমরা ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করেছি। কমিটির সুপারিশের আলোকে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া আমি কিছু বলতে পারবনা।