নোয়াখালী সদর উপজেলায় গণপিটুনিতে আহত আব্দুস শহীদ (৪৩) নামে এক যুবলীগ নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আহত আরও তিনজন হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার উপজেলার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণবহর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের অভিযোগ, পূর্ব বিরোধের জেরে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পরিকল্পতিভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
নিহত শহীদ ওই ইউনিয়নের চরমটুয়া গ্রামের মমিন উল্যাহ মুন্সির ছেলে এবং ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। আহতরা হলেন– জামাল উদ্দিন (৪৩), জাবেদ (৩২) ও রিয়াদ হোসেন (২৮)। তারা সবাই যুবলীগ কর্মী। আগের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের বরাতে সুধারাম মডেল থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি জানান, শনিবার দুপুরে কিছু লোক সূর্যনারায়ণবহর গ্রামের ইসমাইল মুহুরী বাড়ি ঘেরাও করে। সেখানে শহীদসহ চারজনকে আটক করে গণপিটুনি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে চারজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার এবং একটি শটগান জব্দ করা হয়। এরপর তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে যৌথ বাহিনী। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে শহীদ মারা যান। অন্য তিনজন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শহীদকে পিটুনির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রশি দিয়ে হাত বাঁধা শহীদ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন। তাকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে কয়েকজন। লাঠি হাতে একজন শহীদের মাথায় ও মুখে লাথি মারছে।
আহত রিয়াদ বলেন, গত ২৯ মে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়সাল বারীর ভাই আওয়ামী লীগপন্থি আরমান চৌধুরী পরাজিত হন। আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন জেহানের ভোট করি। তিনি বিজয়ী হন। ওই ঘটনার পর থেকে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন ফয়সাল।
তিনি আরও বলেন, শনিবার বেলা ১১টার দিকে জামালের দোকানে বসে চা পান করছিলাম আমি ও শহীদ। এ সময় ফয়সালের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন অস্ত্র নিয়ে আমাদের ধাওয়া করে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা ইসমাইল মুহুরীর বাড়িতে আশ্রয় নিই। হামলাকারীরা ওই বাড়ি ঘেরাও করে শহীদ ও আমাকে ধরে হাত-পা বেঁধে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। এরপর জামাল ও জাবেদকে পিটুনি দেয়। পরে একটি অস্ত্রসহ আমাদের চারজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। তারা সন্ধ্যায় আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করে।
আহত জামাল বলেন, শহীদ ও রিয়াদের কাছে আমি কেন চা বিক্রি করলাম, সে অপরাধে বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আমার দুই পা ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। এরপর অস্ত্র হাতে ধরিয়ে ভিডিও ও ছবি তুলে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে চরমটুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, পূর্ব শক্রতার জেরে ফয়সালের নেতৃত্বে মিয়া ডাকাত, কালা ডাকাত, বাবলু ডাকাতসহ ৮০-৯০ জন চার যুবলীগ নেতাকর্মীকে নির্যাতন করে। এদের মধ্যে শহীদ মারা গেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ফয়সাল বারী বলেন, স্থানীয় লোকজন চারজনকে গণপিটুনি দিয়েছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে যৌথ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি।
তবে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন প্রকাশ বলেন, ফয়সালের সঙ্গে হতাহতদের ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল। এর জেরে শনিবারের ঘটনা ঘটেছে। এর দায় বিএনপি নেবে না। কারণ ফয়সাল কখনো আওয়ামী লীগ কখনো বিএনপি সমর্থন করেন।
শহীদ হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন তার বড় ভাই আবুল কাশেম মাঝি। তিনি বলেন, আমরা মামলা করব। কিন্তু শনিবার রাত থেকে ফয়সালের লোকজন বাড়িতে হানা দিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মমিন উল্যা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। নিহত শহীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন তিনজনের বিরুদ্ধে আগের মামলা থাকায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।