‘আসমান হইল টুটা টুটা জমিন হইল ফাটা, মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে মেঘ দিব তোর কেডা, আল্লাহ, মেঘ দে, আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই, আল্লাহ, মেঘ দে।’ এই গানসহ আঞ্চলিক বিয়ের গান গেয়ে প্রখর তাপদাহ থেকে জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে বৃষ্টির আশায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হলো ব্যাঙ বিয়ে। অনুষ্ঠানে মানুষের বিয়ের মতোই খেলা হয় রঙও।
ঐতিহ্যবাহী নিয়মরীতির মধ্যদিয়ে হয়ে আসা এই ব্যাঙ বিয়ে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ফুলবাড়ী উপজেলার ১নং এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পানিকাটা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানানো হয় পুরো গ্রামবাসীকে। বিয়েতে অংশ নেন বিভিন্ন বয়সী শতাধিক নারী-পুরুষ।
ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়মরীতি পালন ও রাতে ছিল খাবারের আয়োজনও। মূলত এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন ওই গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা আহেতুন বেওয়া।
জানা যায়, বৃদ্ধা আহেতুন বেওয়ার এই আয়োজনে সমর্থন জানিয়ে তার পরিবার ও গ্রামবাসী একটি পুরুষ ও একটি মহিলা লিঙ্গের দুটি ব্যাঙ ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ের আয়োজন করেন। দুপুরে বিয়ে সম্পন্ন হলে, বিকেলে বিবাহিত ব্যাঙ দম্পত্তিকে কলাপাতার বাক্সে নিয়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি ঘুরেন আয়োজকরা। এসময় গ্রামের প্রতিবাড়ি থেকে চাল, ডাল. মুরগিসহ ময়মসল্লা ও টাকা সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে আয়োজন করা হয় রাতের খাবারের। সে আয়োজনে অংশ নেন পুরো গ্রামবাসী।
বৃদ্ধা আহেতুন বেওয়া বলেন, ছোটবেলা দেখতাম বৃষ্টির দেখা না পেলে আমাদের বয়জ্যেষ্ঠরা ঐতিহ্যবাহী নিয়মরীতি মেনে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করতো। বিয়ে দেয়ার পরদিন থেকে সে সময়গুলোতে দেখা মিলতো বৃষ্টির। এখন প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে। বয়সের ভাড়ে ন্যুজ হয়ে পড়েছি। পরিবারের সদস্যদের সাথে পুরোনো স্মৃতিচারণ করলে, পরিবারের সকলে এই ব্যাঙবিবাহে উৎসাহিত হয়। পরে পরিবারের সদস্যরাসহ গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়। বিকালে আকাশে মেঘ জমেছিল। তবে এখনো বৃষ্টির দেখা মিলেনি।
আহেতুন বেওয়ার নাতি সোহেল রানা বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে ফসলি জমি ফেঁটে চৌচির। নলকূপে পানি উঠছে না। খাল-বিল শুখিয়ে আসছে। ফসল বাঁচাতে পানির খুব প্রয়োজন। তাই আমার দাদির মুখে ব্যাঙের বিয়ের কথা শুনে আয়োজন বৃষ্টি প্রাপ্তির আশায় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়। বৃষ্টি হবে কি-না, তা জানি না। পুর্বপুরুষদের অনুসরণ করেই এই রীতি পালন করা হলো।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর অঞ্চলে তিব্র ও মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রথম সপ্তাহ বৃষ্টি হয়েছে ১০৬ মিলি মিটার দ্বিতীয় সপ্তাহে ০৯ মিলি মিটার এবং তৃতীয় সপ্তাহে ১৬ মিলিমিটার। গত দুই সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা চলছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এখন রংপুর বিভাগের জেলায় সম্ভাবনা রয়েছে বৃষ্টির।