২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:৩৩:৪৮ পূর্বাহ্ন


শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে বিস্ফোরণ: এসএন কর্পোরেশনকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৯-২০২৪
শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে বিস্ফোরণ: এসএন কর্পোরেশনকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা ছবি: সংগৃহীত


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় এসএন কর্পোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে মারাত্মক বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তিন মাসের জন্য সব ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় জরিমানা ছাড়াও নিহতদের প্রতি পরিবারে মোট ৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং রুলস, ২০১১ এর ধারা ৪৫.৩ এর অধীনে ৫ লাখ টাকা এবং শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা নির্ধারিত আছে। একইসঙ্গে আহত শ্রমিকদের ১২ মাসের বেতনের সঙ্গে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত চিকিৎসা ব্যয় ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণভাবে বহন করতে হবে। জরিমানা এবং নির্দেশাবলী গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখের একটি চিঠিতে জারি করা হয়। 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব সঞ্জয় কুমার ঘোষ গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এসএন কর্পোরেশনের উপর আরোপিত জরিমানাগুলির মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের জন্য ধারা ৪৫.৪ এর অধীনে ১০ লাখ টাকা, নিরাপদ কাজের পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার জন্য ৪৬.৩ ধারার ১০ লাখ টাকা এবং অপারেশনাল অসদাচরণ জন্য ৪৬.৯ ধারার অধীনে ১০ লাখ টাকা।

উপরন্তু, ধারা ৪৬.১ এর অধীনে ৫ লাখ টাকা জরিমানাসহ সর্বমোট ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং তিন মাসের জন্য ইয়ার্ড বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসএন কর্পোরেশনের সিইও মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জনের পরিবারকে ইতিমধ্যে ৭ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সরকারকে প্রদেয় জরিমানা দ্রুত পরিশোধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

এছাড়া ইয়ার্ড ৩ মাসের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইয়ার্ডে ৩ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। ইয়ার্ড বন্ধ থাকলে পরিবারসহ তারা দুর্ভোগে পড়বে। সরকার মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশা করছি। 

এদিকে এসএন কর্পোরেশনে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে ২০ দফা সুপারিশ জারি করেছে মন্ত্রণালয়। সুপারিশগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য গরম এবং ঠান্ডা কাজ একযোগে পরিচালনা নিষিদ্ধ করা, ট্যাঙ্ক, ইঞ্জিন রুম এবং পাম্প রুম কাটার সময় সঠিক বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা এবং হট ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার আগে গ্যাস খালি করা। 

চিঠিতে ইয়ার্ডকে প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ কর্মী নিয়োগ, জাহাজ কাটার পরিকল্পনা কঠোরভাবে অনুসরণ করার এবং জাহাজের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করার সময় যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, এসএন কর্পোরেশনে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে স্থানীয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে বলে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রফিকুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, গত বুধবার এই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা (মন্ত্রণালয়) এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করবে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের তেতুলতলা সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত এসএন করপোরেশন গ্রীণ (সবুজ সনদপ্রাপ্ত) শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। প্রায় ভেঙে পড়া একটি ট্যাঙ্কার জাহাজ কাটার কাজ চলমান ছিল শিপ ইয়ার্ডটিতে। ইঞ্জিনরুম ও পাম্প রুমে একইসঙ্গে বিপজ্জনক কাটিংয়ের হট ওয়ার্ক করা হচ্ছিল সেদিন। মূলত ইঞ্জিনরুম থেকেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়৷ ওইদিন জাহাজটিতে মোট ১৬-১৭ জন জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত থাকলেও দগ্ধ হন ১৪ হন। এর মধ্যে ৮ জন গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন৷ তাদের শরীরের শ্বাসনালীসহ ৮০-৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ওই ৮ জনকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং বাকি চারজনকে সিএমসিএইচে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

গত ৯ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা এস এন করপোরেশন শিপ ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শিল্প মন্ত্রণালায় এসএন কর্পোরেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরের দিন পরিবেশ অধিদপ্তর ইয়ার্ডটির পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং জাহাজের কাটিংয়ের অনুমতি স্থগিত করে।