সুনামগঞ্জের চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত চাঁনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৫ঘন্টায় কোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে। পাচাঁরকৃত মালামালের ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গিয়ে এক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্মার পড়েছেন মহাবিপদে। তাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করে চোরাকারবারীরা। বিজিবির পক্ষ থেকে চোরাচালান বন্ধের জন্য কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে চোরাকারবারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই র্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার পর থেকে আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টা পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, মাহারাম টিলা, আনন্দনগর, কড়ইগড়া ও রাজাই এলাকা দিয়ে একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী শাহিবুর মিয়া, ফখর উদ্দিন, তোতা মিয়া, বুটকন মিয়া, বুলবুল মিয়া ও তোতলা আজাদগং পৃথক ভারত থেকে ১হাজার বস্তা চিনি, ১ হাজার বস্তা ফুছকাসহ নাসিরউদ্দিন বিড়ি, সুপারী ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে। পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল অটোরিক্সা বোঝাই করে চাঁনপুর বাজার, পাশের লাউড়গড় বাজার ও বাদাঘাট বাজারের বিভিন্ন দোকানপাটে নিয়ে মজুত করাসহ চোরাকারবারীদের বসতবাড়ি বড়গোফ, শিমুলতলা, বারোহাল ও কামড়াবন্দ গ্রামে নিয়ে মজুত করে। এরআগে গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ২টা থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত একই ভাবে প্রায় ২০লাখ টাকার মালামাল পাচাঁর করে। আর দেশীয় ১৩০বস্তা রসুন, ৫০কেজি মাছ ও শাক-শবজি ভারতে পাচাঁর করে। অন্যদিকে এই সীমান্তের নয়াছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে পাচাঁরকৃত প্রায় ৩শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে চোরাকারবারী জামাল মিয়া, নজরুল মিয়া, রুসমত আলী, নজির মিয়া, জহির মিয়া, নাসির মিয়া, রুবেল মিয়া ও হারুন মিয়াগং তাদের বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে মজুত করে। এরপর সারাদিন ব্যাপী ১৫টি মোটর সাইকেল যোগে পাচাঁরকৃত কয়লার বস্তা পাশের টেকেরঘাট ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত বড়ছড়া পূর্বপাড়া মাদ্রাসার পাশের স্থানে ও এই সাদ্রাসা সংলগ্ন শাহ পরানের বাড়িতে নিয়ে মজুত করে বড়ছড়া এলাকার চোরাকারবারী সোহেল খন্দাকার, সোর্স আক্কল আলী, কামাল মিয়া ও উপরের উল্লেখিত চোরাকারবারীরা। কিন্তু বিজিবি পক্ষ থেকে অবৈধ মালামাল আটকের এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিজিবির নাম ভাংগিয়ে সোর্স পরিচয় দিয়ে চোরাকারবারী কুদ্দুস মিয়া, জহির মিয়া,ফখর উদ্দিন ও তোতা মিয়া পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা কয়লা থেকে ৬০টাকা, চিনি থেকে ১শত টাকা, সুপারী থেকে ৩শ টাকা, ফুছকা থেকে ১৫০টাকা ও বিড়ি-মদসহ অন্যান্য মালামাল থেকে বিভিন্ন হারে চাঁদা নেয় বলে জানাগেছে।
এব্যাপারে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সীমান্তের কড়ইগড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক কফিল উদ্দিন বলেন-টহলে থাকা বিজিবি সদস্যরা দাড়িয়ে থেকে চাঁদা নিয়ে ভারত থেকে মালামাল পাচাঁর করে চোরাকারবারীদেরকে দিয়ে। আমি সকাল ৯টায় তাদের পাচাঁরকৃত কোটি টাকার অবৈধ মালামালের ভিডিও করতে গেলে চোরাকারবারী ফকর উদ্দিন ও বুলবুল তাদের বাহিনী নিয়ে গলা টিপে প্রাণে মারার চেষ্টা করে। এরআগে আমি থানা সাধারণ ডায়রি করেছি। র্যাব ও সেনা বাহিনী ছাড়া এই সীমান্তের চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব না।
এব্যাপারে চাঁনপুর ক্যাম্পের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬১৩১২৯) নাম্বারে কল করলে ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার মিজান বলেন- এব্যাপারে লেখালেখির দরকার নাই, ক্যাম্পে আসেন সরাসরি কথা বলে আপনাকে খুশি করার ব্যবস্থা করা হবে। এই চোরাচালানের বিয়ষে জানাতে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়কের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬০৩১৩০) নাম্বারে বারবার কল করার পর শুধু ব্যস্ত দেখায়, কেউ রিসিভ করেনি।