১৫ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৮:১৯:০৫ পূর্বাহ্ন


প্রথমবারের মতো বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুতের তিনটি ইউনিট-ই বন্ধ
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৪
প্রথমবারের মতো বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুতের তিনটি ইউনিট-ই বন্ধ ফাইল ফটো


১ দিন পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি যান্ত্রিকক্রুটির কারণে বন্ধ হওয়া দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম। চীন থেকে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) না আসা পর্যন্ত চালু হচ্ছে না তিনটির একটিও ইউনিট। এতে চরম লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলাবাসী।

দীর্ঘ ১ মাস ৬ দিন যান্ত্রিকক্রুটির কারণে বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল শোয়া ৫টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছিল তৃতীয় ইউনিটটিতে। ইতোপূর্বে দুইটি ইউনিট বন্ধ থাকলেও সচল হওয়ার দুইদিন পরেই তৃতীয় ইউনিটটিও গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ফের যান্ত্রিকক্রুটির কারণে বন্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই ইউনিটতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো এবং তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক।

এদিকে ঘনঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে পাবর্তীপুর ও ফুলবাড়ীবাসী। দিন-রাতের বেশিভাগ সময়েই হঠাৎ লোডশেডিং ও তাপমাত্রা যেনো দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে জনজীবন।

সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জানা যায়, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান  হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। চুক্তিভিত্তিক এ ঠিকাদারের মেয়াদ ৫বছর। আগামী বছর শেষ হবে তাদের চুক্তির মেয়াদ। চুক্তি মোতাবেক উৎপাদন সচল রাখতে মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তা করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বারবার ক্রুটি দেখা দিচ্ছে। সে কারণেই ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন হয় দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প। ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট থাকায় যেকোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর উৎপাদন কার্যক্রম। গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) চালু হওয়া তৃতীয় ইউনিটটির অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হওয়ায় ফের বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সেই সাথে রাত পৌনে নয়টা সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নং ইউনিটটি। ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও মাত্র ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তাতে। অপর দুই নং ইউনিটটিও ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও সেটিতেও মাত্র ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। তিনটি ইউনিট উৎপাদনের জন্য দৈনিক কয়লার প্রয়োজন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে বর্তমানে মজুত আছে প্রায় ২ লাখ টন কয়লা। কয়লাখনি থেকে কয়লা সরবরাহ করার ওপর নির্ভর করে চলে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এই প্রথম বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটই বন্ধ হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের আট জেলা চরম লোর্ডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিটি ইউনিটে দুটি করে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) থাকে। সেটি তেল সরবরাহের মাধ্যমে জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) ২০২২ সালের অক্টোবরে বিকল হয়ে যায়। রির্জাভে থাকা অপর অয়েল পাম্পটিও গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকল হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় তৃতীয় ইউনিট। বিষয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে  চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। তারা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। চীন থেকে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) এলেই চালু হবে ইউনিট।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির পার্শ্বে ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যায়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চীনা কারিগরি সহায়তায় স্থাপন করা হয়।