২৪ জুন ২০২৪, সোমবার, ০১:১১:০৫ পূর্বাহ্ন


সরকার দাম বাড়ালে সাথে সাথে কার্যকর হয়, আর দাম কমালে সাথে সাথে কার্যকর হয় না
ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৬-২০২৪
সরকার দাম বাড়ালে সাথে সাথে কার্যকর হয়, আর দাম কমালে সাথে সাথে কার্যকর হয় না রাজশাহীর সাপ্তাহিক বাজারদর


২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। বাজেটের পরে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আবারও বাড়ছে। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছ ও মুরগির দাম করেছে। গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল আছে।

রাজশাহীর সাপ্তাহিক বাজারদর

শনিবার (৮ জুন) রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অত্যন্ত চড়া। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামও কমবেশি বাড়তি। যে কারণে বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায় ও সাদা ডিম ৪৮ টাকায় । বেড়েছে বাজারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সবজি আলুর দাম। গত বছর থেকে আলুর দাম অসহনীয়। এখন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা ২দিন আগেও ৫০ টাকা ছিল। গত এক সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৭০ টাকা ছিল। এদিকে পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আদা-রসুনের দামও চড়া হয়েছে। প্রতি কেজি আদা ও রসুন ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। এছাড়াও বেগুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা এবং কচুর মুখি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকা করে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, এছাড়াও ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা। মিষ্টিকুমড়া ৫০, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৬০, সজনে ডাঁটা ৮০-১২০, পটল ৫০-৬০, কাঁচামরিচ ২০০, লাউ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দাম বাড়তি থাকা প্রসঙ্গে বিক্রেতা রিমন হোসেন বলেন, তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে সবজি সরবরাহের ক্ষেত্রে। চাষিদের ক্ষেতে সবজি নষ্ট হচ্ছে। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে সবজির দাম। তবে কিছু সবজি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। 

সাপ্তাহিক বাজারদর

এদিকে কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও সোনালী মুরগির দাম। এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় ও সোনালী মুরগি বিক্রি হয়েঝে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। গরু প্রতিকেজি ৭৫০ টাকা ও খাসি ১১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, চাষের শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়, রুই প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়, দেশি ছোট কই প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়, পাবদা প্রতি কেজি মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, শোল মাছ একটু বড় সাইজের প্রতি কেজি ৯০০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকায়, কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় ও টেংরা মাছ ছোট সাইজের প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা সরকারি চাকরিজীবী বিল্লাল হোসেন বলেন, বাজেটে দাম আর কত বাড়াবে, কী-ই বা বাড়াবে। এমনিতেই তো সব কিছুর দাম বেশি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এমনিতেই কমে গেছে। তবে এবার একটা জিনিস দেখলাম, প্রতিবার বাজেট হলেই বাজারে একটা প্রভাব পরে, মানে দাম বেড়ে যায়। আজকে দেখলাম আগে যে দাম ছিল সেরকম দামই আছে। তেমন কিছু পরিবর্তন হয়নি।

এদিকে ছোট মসুর ডালের দাম কমেছে ৫, খেসারি ডালের দাম কমেছে ২০, প্যাকেটজাত চিনির দাম কমেছে ১০, আটা দুই কেজির প্যাকেটের দাম কমেছে ১৫ টাকা। আর ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা।

আরও পড়ুন: রাজশাহীর সাপ্তাহিক বাজারদর

আজকে প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০-১৪০, ছোট মসুর ডাল ১৩৫, মোটা মসুর ডাল ১১০, বড় মুগ ডাল ১৬০,  ছোট মুগ ডাল ১৮০, খেসারি ডাল ১০০, বুটের ডাল ১১৫, ডাবলি ৮০, ছোলা ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০, খোলা ঘি ১২৫০, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫, খোলা চিনি ১৩০, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫, খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এক সপ্তাহ আগে কাজু বাদাম ছিল ১৩০০, আজকে হয়েছে ১৪০০ টাকা। পেস্তা বাদাম ছিল ২৭০০, আজকে হয়েছে ২৮০০ টাকা। কাঠবাদাম ছিল ১১৮০, আজকে হয়েছে ১২৫০ টাকা।

আরিফ স্টোরের বিক্রেতা আরিফ ইসলাম বলেন, বাজেটে শুধু কাজু বাদামের দাম বাড়ানো হলেও বাজারে সব ধরনের বাদামের দামই বেড়ে গেছে। আর এমনিতে অন্যান্য প্রোডাক্টের দাম স্বাভাবিকই আছে। স্বাভাবিক বলতে যেমন ছিল তেমনই আরকি। তবে চিনির দাম কমেছে। আর সয়াবিন তেলের দাম কোম্পানি থেকেই কমানো হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে সয়াবিনের চাহিদা কমে গিয়েছে, তাই কোম্পানি দাম কমিয়ে দিয়েছে। 

ক্রেতাদের অভিযোগ, ভোক্তারা অনেক ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি। সরকার দাম বাড়ালে মিনিটের মধ্যে কার্যকর হয়। আর দাম কমালে দিনের পর দিন তা কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। কার্যকর হয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে।