বর্তমান সময়ের জটিল কৃত্রিম খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় রক্তে সুগার লেভেল বেশি থাকা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। প্রাথমিক ভাবে সুস্থ মানুষের বেশি ব্লাড সুগার ডায়াবেটিসের কারন হবে না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আপনি যদি সুগার নিয়ন্ত্রন না করেন, অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলির সাথে বেশি ব্লাড সুগার আপনাকে প্রি ডায়াবেটিস করে তুলবে বা প্রি ডায়াবেটিস থেকে কখন ডায়াবেটিস হয়ে উঠবেন ধরতেই পারবেন না।
আবার আপনার যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকে, বাধ্যতামূলকভাবে আপনার ব্লাড সুগার কন্ট্রোল রাখা দরকার না হলে ডায়াবেটিসের সমস্যাগুলি আরো জটিল হয়ে উঠবে। মানে আপনাকে প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখতে হবে আপনার ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে আছে কিনা।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল ওষুধ সেবন, শরীর চর্চা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ম মাফিক করলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু তা পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শরীরে কেন সুগার বেড়ে যাচ্ছে, তা লক্ষ্য রাখা অনেক জরুরি।
শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায় -
ঘন ঘন মূত্র ত্যাগঃ- ঘুমোতে যাওয়ার ঠিক আগে জল খেলে মাঝরাতে মূত্র ত্যাগের জন্য ঘুম ভাঙা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আপনার ব্লাড সুগার লেভেল বেশি হলে ইউরিনারি ট্রাক্ট এ ইনফেকশন এর সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। ইউরিনারি ট্রাক্ট এ ইনফেকশন হলে রাত্রে মুত্র ত্যাগের জন্য ঘুম ভেঙে যেতে পারে। বিষয়টি এক দু'দিন হলে ঠিক আছে। কিন্তু বরাবর ঘটতে থাকলে আপনাকে সাবধান হতে হবে। সুগার নিয়ন্ত্রনের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ব্লাড সুগার বেড়ে গেলে শুধু রাত্রেই বেশি বাথরুম যেতে হবে এমন কিন্তু না। আপনার দিনেও সমস্যা হবে।
ঝাপসা দৃষ্টিঃ- একটু বয়স বাড়লেই ঝাপসা দৃষ্টি খুবি সাধারন একটি ঘটনা। তবে ঝাপসা দৃষ্টির একটি বড় কারন দেহে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি। রক্তে সুগার বাড়লে চোখের রক্ত পরিবহনতন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। চোখের লেন্সে অতিরিক্ত ফ্লুইড জমা হয়ে ফুলে যায়। ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। আপনি যদি সুগার নিয়ন্ত্রনে না এনে শুধুমাত্র চশমার সাহায্যে চোখের দৃষ্টি ঠিক করতে চান। তাহলে বিপদ বাড়তে থাকবে।
মনোযোগে সমস্যাঃ- আপনার শরীরে ইনসুলিনের অভাব ঘটলে রক্ত থেকে কোষের সুগার কম যায়। ফলে কোষ শক্তি কম পায়। কোষ শক্তি কম পেলে শরীরের অঙ্গগুলি ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। আপনার স্নায়ুতন্ত্রও ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না। ফলে আপনার ক্লান্তি আসে এবং কোনো কাজে মন বসাতে পারেন না। আপনার যদি মনোযোগ বসাতে সমস্যা হয় তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা চেক করে নিতে পারেন।
শুষ্ক মুখঃ- মুখ সবসময় শুকনো শুকনো লাগে সুগার নিয়ন্ত্রন হারানোর সম্ভাবনা আছে। আপনার যদি আরও কিছু লক্ষণ মিলে যায় তাহলে একবার ব্লাড সুগার টেস্ট করিয়ে নিন অন্তত একবার। শুধু শুষ্ক মুখ নয় ব্লাড সুগার বাড়লে আপনার ত্বকও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, চুলকাতে পারে।
ক্ষত সহজে না সারাঃ- প্রায় বিভিন্ন কারনে আমাদের শরীর কমবেশি কেটে যায়। যাদের ব্লাড সুগার লেভেল বেশি তাদের ক্ষত স্থান সারতে তুলনামূলক বেশি দিন লাগে। হাই ব্লাড সুগার লেভেলের জন্য নার্ভ ও ব্লাড ভেসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ক্ষত সারানোর উপাদানগুলো ঠিকঠাক কাজ করে না। ক্ষত সারতে সময় লাগে। আপনার যদি ক্ষত স্থান সারতে সময় লাগে তাহলে ব্লাড সুগার টেস্ট করিয়ে নিন।
পেট খারাপঃ- আপনার কি প্রায় পেট খারাপ হয়? পেট ফেপে যায়? যখন তখন গ্যাস হয়? পেট ব্যাথা করে? কারনে অকারনে বমি পায়? তাহলে আপনার ব্লাড সুগার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনার সুগার নিয়ন্ত্রন হারালে পাকস্থলী থেকে খাবার খালি হতে সময় লাগে। এবং পেটের সমস্যাগুলো শুরু হয়।
অতিরিক্ত তৃষ্ণাঃ- ব্লাড সুগার যখন অতিরিক্ত হয়। তখন অতিরিক্ত সুগারকে পরিশ্রুত ও শোষণ করার জন্য আপনার কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। শরীর থেকে মূত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়। আপনার অতিরিক্ত তৃষ্ণা পায়। আপনি যদি যখন তখন অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করেন। একবার রক্তে সুগার চেকআপ করে নিন।
অতিরিক্ত খিদেঃ- আপনার রক্তের সুগার বেড়ে গেলে ইনক্রিটিন হরমোন কমে যায়। ফলে সহজে আপনার পাকস্থলী খালি হয়ে যায়। খাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে আবার খিদে পায়। আপনার যদি এরকম বারবার খিদে পায় ব্লাড সুগার বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সুগার নিয়ন্ত্রনে খাদ্যভ্যাস ও জীবনযাত্রা অনুসরন করা উচিৎ।
ত্বকের রং বদলঃ- আপনার সুগার নিয়ন্ত্রন হারাতে থাকলে আপনার ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় রঙ কিছুটা হালকা বা গাঢ় হতে পারে। কোথাও কোথাও কোষের প্রবর্ধক দেখা দিতে পারে। আপনার ঘাড়ে, পিঠে ও হাতে কালো কালো দেখা যেতে পারে। এগুলো ব্লাড সুগার লেভেল হাইয়ের লক্ষণ তাই টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত করে নিন।