২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:৩৩:২৫ অপরাহ্ন


রাজশাহীর নগরীর কাটাখালী পৌরসভায় এই প্রথম নারী মেয়র
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৪
রাজশাহীর নগরীর কাটাখালী পৌরসভায় এই প্রথম নারী মেয়র রাজশাহীর নগরীর কাটাখালী পৌরসভায় এই প্রথম নারী মেয়র


রাজশাহী মহানগরীতে এই নারী প্রথমবারের মতো কাটাখালী পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রাবেয়া সুলতানা মিতু। হারিয়ে দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী আট প্রার্থীকে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে রাবেয়ার পাওয়া ভোটের ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ।

রোববারের এই ভোটের পর এর ফলাফল নিয়ে এখন বিশ্লেষণ চলছে। রাজশাহীর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রাবেয়ার এই বিজয়কে একটু আলাদা চোখেই বিচার করা হচ্ছে। কারণ, তাঁর জয়ের নেপথ্যে রয়েছেন স্বামী সাবেক মেয়র মোঃ আব্বাস আলী। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ঘরোয়া আলাপের একটি অডিও ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং এই অডিওকে কেন্দ্র করে করা মামলার কারণে প্রায় একবছর তিনি কারাভোগ করেন। তখন তাকে মেয়রের পদ থেকেও বরখাস্ত করা হয়।

স্থানীয় রাজনীতিতে আব্বাস কোণঠাসা হওয়ার পরে তাঁর জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন দলের নেতা আবু শামা। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদও পেয়ে যান। এই উপনির্বাচনে তিনি মেয়রপ্রার্থীও হয়েছিলেন। তবে ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৪৮৭ ভোট। আর আব্বাসপত্নী রাবেয়া পেয়েছেন ৬ হাজার ৩০৮ ভোট। আব্বাসবিরোধী হিসেবে পরিচিত পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম রিপন পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৩৩৯ ভোট। এক সময়ের জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এই এলাকায় সাবেক শিবির নেতা মিজানুর রহমান পেয়েছেন ২ হাজার ৯১৭ আর জামায়াত নেতা সিরাজুল হক পেয়েছেন মাত্র ৩৮৪ ভোট। ভোটের ফলে কয়েকজন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

এই নির্বাচনে রাবেয়ার বিজয়কে স্বামী আব্বাস আলীর বিজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, কাটাখালী এলাকাটি একসময় জামায়াত অধ্যুষিত ছিল। এবারের উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মিজানুর রহমানের বাবা জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পৌরসভা গঠনের পর মেয়রও হন। সবমিলিয়ে প্রায় দেড় দশক তিনি কাটাখালীর জনপ্রতিনিধি হিসেবে জামায়াতকে শক্তিশালী করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দুইবার মেয়র হয়ে আব্বাস আলী জামায়াতের সেই শক্তি ভেঙে দেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁকেই কোণঠাসা করে তাঁর জায়গা দখলের চেষ্টা করেছিলেন। তারা কিছুদিন সুযোগ পেয়ে কাটাখালীতে সন্ত্রাস শুরু করেছিলেন। এই ভোটে অনেক ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হয়েছে। ভোটে আব্বাসের স্ত্রীর জয় মানে আব্বাসেরই জয়।’

আগে কখনও রাজনীতি না করেও রাবেয়ার বিপুল ভোটে এই জয়ের কারণ কী, এমন প্রশ্নে কাটাখালী বাজারের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কারণ শুধুমাত্র তাঁর স্বামী। স্বামী আব্বাস আলীকে দেখেই পৌরবাসী রাবেয়াকে ভোট দিয়েছে। কারণ, আব্বাস আলী মেয়র থাকা অবস্থায় ভাল কাজ করেছেন। এলাকার উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে করোনার সময় তিনি যেভাবে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন সে কথা এখনও মানুষের মুখে মুখে। তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু থামানো যায়নি। এই ভোটেই সেটার প্রমাণ হয়েছে।’

এই নির্বাচনে যে কোন উপায়ে আব্বাসপত্নীকে ঠেকানোই ছিল অন্য প্রার্থীদের লক্ষ্য। আইনগত বাঁধার কারণে আব্বাস প্রার্থী হতে না পারলে ভোটে আসেন স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিলের সময় শেষেও তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ পান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য আট প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে চোটপাট করেছিলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের এই আট প্রার্থী একসঙ্গে বলেছিলেন, রাবেয়াকে যেন প্রার্থিতা দেওয়া না হয়। তাঁদের মধ্যে থেকে সাতজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। একজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। তবে শেষপর্যন্ত তা হয়নি। ভোটে রাবেয়াই মেয়র হলেন।

এখন স্বামীর দিকনির্দেশনা নিয়েই পৌরসভাকে এগিয়ে নিতে চান রাবেয়া। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী এই পৌরসভার দুইবারের মেয়র ছিলেন। তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা আছে। আমি নতুন হলেও তাঁর দিকনির্দেশনা নিয়ে পৌরসভাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমি কাজ করব।’

রাবেয়ার স্বামী সাবেক মেয়র আব্বাস আলী বলেন, ‘ভোটের এই ফল সব ধরনের অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের জবাব। এই জয় কাটাখালী পৌরসভার সকল মানুষের জয়। তাঁরা যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, এই ভোটের ফল তার প্রমাণ। এখন আগের মতো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও ইভটিজিংমুক্ত এলাকা গঠনই আমাদের লক্ষ্য। পৌরসভায় আবার নাগরিক সেবা ফিরে আসবে।’