২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৪:৪১:৩৪ অপরাহ্ন


যে আফসোসের কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১২-২০২৩
যে আফসোসের কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী যে আফসোসের কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী


বেগম রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,‘বেগম রোকেয়া আমাদের দেশের বাঙালি নারীদের বিশেষ করে মুসলিম নারীদের শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন। সেই সঙ্গে আমি আমার মায়ের কথা বলতে চাই, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে আমার মা সব সময় আমার বাবার পাশে ছিলেন। সাংসারিক কোনো কাজে কখনো তিনি আমার বাবাকে কোনো রকমের ব্যতিব্যস্ত করেননি।

দিনের পর দিন আমার বাবাকে কারাগারে থাকতে হত অথবা বাইরে থাকলেও ব্যস্ত থাকতে হত। সংসার সামলানো, দল সুসংগঠিত করা, আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সবই কিন্তু তিনি করেছেন। সে জন্যই ঘাতকের দল ১৫ আগস্ট আমার মাকেও ছাড়েনি।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

 পদক প্রাপ্তরা হলেন নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, (মরণোত্তর), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসক হালিদা হানুম আখতার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে নেত্রকোনার কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), পল্লি উন্নয়নে ঠাকুরগাঁওয়ের রনিতা বালা এবং নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে নারীরা সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রেখেছে। প্রীতিলতা নিজে হাতে অস্ত্র নিয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

পাকিস্তান আমলে আমাদের নারীদের অনেক বাধা ছিল। অনেক কর্মক্ষেত্রে নারীদের কোনো সুযোগ দেওয়া হত না। তখন মুসলমান মেয়েরা ঘরে অবরুদ্ধ থাকত, তাদের লেখাপড়া করার কোনো সুযোগ ছিল না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সেই সুযোগ দিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বেগম রোকেয়াকে তাঁর স্বামী এবং ভাই সাহায্য করেছেন।

তিনি নিজের প্রচেষ্টায় উর্দু, বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা শিখেছেন। তিনি তাঁর স্বামীর কাছ থেকে আক্ষরিক জ্ঞান এবং বই পড়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি স্বামীর নামে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল করেন। স্কুলে ছাত্রী পাওয়া যেত না। তিনি নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রী নিয়ে আসতেন। অনেক বাধা বিপত্তি এলেও তিনি দমে যাননি। তিনি সব সময় বলতেন, মেয়েরা আরো শিক্ষিত হোক। তিনি চাইতেন, মেয়েরা জজ ব্যারিস্টার হবে। তাঁর প্রত্যাশা আমরা অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি এখন।’

অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া একজন নারীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে সমাজ-পরিবারে তার কোনো গুরুত্ব থাকে না। আমরা সবসময় এটাই চেষ্টা করি, আমাদের নারীরা স্বাবলম্বী হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। বেগম রোকেয়াও কিন্তু সে কথাই বলেছেন। নারীরা যেদিন জজ-ব্যারিস্টার হবে সেদিনই তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে। আমরা যথেষ্ট অগ্রগামী, কারণ আমরা যদি দেখি পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নারীকে নির্বাচিত করতে পারেনি। সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে কিন্তু আজ পর্যন্ত নারী প্রেসিডেন্ট হয়নি। আমাদের এই অঞ্চলে তা নয়, দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশের দিক থেকে আমরা অনেক অগ্রগামী। আমরা বলতে পারি, রোকেয়ার স্বপ্ন আমরা অনেকটাই বাস্তবায়ন করেছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় এসে দেখলাম আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারপতি নেই। তখন আমি উদ্যোগ নিলাম, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছি, চিফ জাস্টিসের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমাদের আইনমন্ত্রীকে বলেছি উচ্চআদালতে যখন জজ নিয়োগ দেওয়া হবে তখন সেখানে যদি কোনো নারীর নাম না থাকে তাহলে আমি ওই ফাইল কখনো সাইন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব না।’

নাজমুন আরা প্রথম নারী বিচারপতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটা আফসোস রয়ে গেছে। খুব ইচ্ছা ছিল একজন নারীকে আমি প্রধান বিচারপতি করে যাব। কিন্তু আমাদের সমাজ এত বেশি কনজারভেটিভ, এগুলো ভাঙতে সময় লাগে। সে জন্য করতে পারিনি। এ আফসোসটা থেকে গেল।’