০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০২:০৮:২৩ অপরাহ্ন


নীলফামারীতে নতুন শস্যে চিয়া ও কিনোয়ার চাষে সম্ভাবনা
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২২
নীলফামারীতে নতুন শস্যে  চিয়া ও কিনোয়ার চাষে সম্ভাবনা নীলফামারীতে নতুন শস্যে চিয়া ও কিনোয়ার চাষে সম্ভাবনা


চিয়া ও কিনোয়া নামের ‘সুপারফুডের’ উত্পাদনযোগ্য প্রজাতির ফলন শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে এগুলো গ্রহণের প্রতি আগ্রহ। উত্তরের জেলা নীলফামারীতে এবার প্রথম চাষ হচ্ছে চিয়া ও কিনোয়া নামের দুটি উচ্চগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য। নতুন শস্যের বাজারজাত সৃষ্টি করতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন।

সুস্থ দেহ সুন্দর মন। আর সুস্থ দেহ নিশ্চিত করতে হলে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরের ধাপে মানুষের লক্ষ্য থাকে পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তার দিকে। বাংলাদেশেও বর্তমানে সবার জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চয়তার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার যেগুলো হবে সবার জন্য সাশ্রয়ী। এমনই সাধারণত প্রচুর পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবারকেই সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ, এসব খাবার যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান এবং খুব কম ক্যালোরি সরবরাহ করে।

মেক্সিকো ও আমেরিকার উচ্চ পুষ্টিতে ভরপুর, মানবদেহের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী বিভিন্ন রোগের ওষধিগুণ সম্পন্ন সুপারসিড নতুন ফসল ‘চিয়ার’ এই প্রথম চাষ হচ্ছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায়। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চিয়া চাষে উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এদেশে চাষাবাদের উপযোগী জাত উৎপাদন করে নাম দিয়েছেন বাউ চিয়া।

ঐ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতাংশ জমিতে বাউ চিয়ার চাষ করেছেন। ফসলও আশানুরূপ হয়েছে। বাজারে সুবিধা পেলে ভবিষ্যতে আরো বেশি জমিতে উচ্চমূল্যের এ ফসল চাষ করবেন। ২০ শতাংশ জমিতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। যা ফলন হবে ৪০ থেকে ৫০ কেজি। ৬শ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হবে। রোগবালাই, পরিচর্যা কম—যা অন্য ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি বাংলাদেশে চাষের উপযোগী সাউ কিনোয়া-১ জাতের উদ্ভাবন করেছেন। এই সুপারফুডটি বাংলাদেশে উৎপাদন এবং তার বাজারজাতকরণের জন্য অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখছে। নতুন ফসল পরীক্ষামূলক চাষে নেমে কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি জানতে পেরেছি এই ফসলের দাম অনেক। এর বাজারজাতকরণে সহযোগিতা পেলে আমরা ধান-পাট-সরিষার চেয়ে বেশি লাভবান হতে পারব।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় এই নতুন দুই প্রকার ফসলের উৎপাদনে বিশেষ তদারকি করছেন। তিনি চিয়া ফসল সম্পর্কে বলেন, ফসলটি দেশীয় পদ্ধতিতে সারিবদ্ধ কিংবা বীজ ছিটিয়ে চাষাবাদ করা যায়। চিয়া সাধারণত একটি রবি মৌসুমের তিন মাসের ফসল। অক্টোবর মাসে বীজ রোপণ করতে হয়। গম বা সরিষার মতো মাড়াই করে, যথাযথ চালুনি, মশারির কাপড়, কুলা ইত্যাদি ব্যবহার করে সহজে বীজ পরিষ্কার করা যায়।

তিনি আরও জানান, মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোতে চিয়া একটি ঔষধি ফসল হিসেবে চাষ হয়।

চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্ফফেরল, ক্লোরোজেনিক এবং ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে চিয়া সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, চিয়া ও কিনোয়া ফসল দুটি আমরা কৃষকদের কাছে ছড়িয়ে দিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এটির উৎপাদন ও বাজারজাত সুনির্দিষ্টভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকদের অপুষ্টি ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তির দুয়ার খুলে দিতে পারে।

রাজশাহীর সময় / এম জি