২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০১:৫৬:০৩ পূর্বাহ্ন


গ্রামে জনপ্রিয়তা বাড়ছে স্কুল ব্যাংকিংয়ের
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৩
গ্রামে জনপ্রিয়তা বাড়ছে স্কুল ব্যাংকিংয়ের


স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের সুবাদে সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাও। এ সেবায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এবং সঞ্চয়ের পরিমাণÑ দুই-ই বাড়ছে। তবে শহরের চেয়ে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে এ সেবার জনপ্রিয়তা বেশি। গত এক বছরে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় যে পরিমাণ হিসাব খোলা হয়েছে, তার ৭৬ শতাংশই গ্রামে। শুধু তা-ই নয়, গত এক বছরে গ্রামে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আমানত বেড়েছে ১০ গুণের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আড়াই বছরে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এ সেবার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা অ্যাকাউন্ট খোলায় এগিয়ে রয়েছে। আর জুন শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি বাণিজ্যিক ব্যাংকও আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে। ওই আমানত বিনিয়োগের মাধ্যমে অবদান রাখছে জাতীয় অর্থনীতিতে।

২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম চালু করে। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পান ২০১১ সালে। আর ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর স্কুল ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয়। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য হলোÑ ছোটবেলা থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের উপযোগী করে গড়ে তোলা।

মাত্র ১০০ টাকা জমা রেখে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ এবং মুনাফার হার ভালো হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুল ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া এসব অ্যাকাউন্টের সঙ্গে কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়। যেমনÑ সব ধরনের ফি ও চার্জে রেয়াত সুবিধা, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় এবং স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগও রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি স্কুল-ব্যাংকিং চালু করেছে। গত জুন শেষে এসব ব্যাংকে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৮১২টি। এসব হিসাবে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

তিন মাস আগে স্কুল শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৫৮টি। আর আমানতের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন মাসের ব্যবধানে স্কুল ব্যাংকিংয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৯১ হাজার ৪৫৪টি। আর আমানত বেড়েছে ৮৮ কোটি টাকা। তবে গত এক বছরের হিসাবে স্কুল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৬১৯টি। আর আমানত বেড়েছে ২ হাজার ১২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গত বছরের জুন শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাবের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ১৮ হাজার ১৯৩টি। আর আমানতের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় গ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২২ লাখ ৬ হাজার ৯২১টি, যা এক বছর আগেও ছিল ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪৮টি। ফলে এক বছরের ব্যবধান গ্রামে অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৩টি। এ সময়ে গ্রামে আমানতের পরিমাণ ১০ গুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯০ কোটি ২৯ লাখ টাকায়, যা গত বছরের জুনে ছিল ৬৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। অন্যদিকে গত এক বছরে শহরে অ্যাকাউন্ট খোলা বেড়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৬টি। আর আমানত বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ে ২৮ লাখ ৫১ হাজার ৮৯২টি হিসাব খুলেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এসব হিসাবে জমা হওয়া আমানতের পরিমাণ এক হাজার ৮৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর পরেই আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো, যারা এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৩টি হিসাব খুলেছে। এসব হিসাবে সঞ্চয়ের পরিমাণ ৩৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোয় অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২ হাজার ৭২০টি, এসব হিসাবে জমা হয়েছে ৯২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো হিসাব খুলেছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৭টি। এসব হিসাবে জমা আছে ৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, স্কুল ব্যাংকিংয়ে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অ্যাকাউন্ট খোলায় এগিয়ে রয়েছে। মোট অ্যাকাউন্টের ৫৩ শতাংশই ছেলেদের। এর পরিমাণ ১৭ লাখ ১২ হাজার ২৩৪টি। স্বাভাবিকভাবে আমানতের পরিমাণেও এগিয়ে রয়েছে ছেলেরা। মোট আমানতের ৫৫ শতাংশই ছেলেদের।

সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে ঢাকা বিভাগে (২৫ দশমিক ২০ শতাংশ)। এরপরেই আছে চট্টগ্রাম (২১ দশমিক ১৩ শতাংশ), রাজশাহী (১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ) ও খুলনা (১১ দশমিক ২১ শতাংশ)। আমানতেও সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা বিভাগ (৪৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ)। এরপর আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম (২২ দশমিক ৮১ শতাংশ), রাজশাহী (৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ) ও খুলনা (৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ)।

উল্লেখ্য, স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘চাইল্ড এন্ড ইউথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল’র (সিওয়াইএফআই) ‘কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয় বাংলাদেশ।