নগদ টাকার পরিবর্তে ক্যাশলেস লেনদেনে ঝুঁকছে মানুষ। একটা সময় মানুষ ব্যাংক কার্ড নিতে আগ্রহ দেখাতেন না। তবে এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই কার্ড ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। তাই দিন দিন কার্ডের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যার পরিমাণ গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট, ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৫। ২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৯৮ লাখ ৪৯ হাজার ১৩৬। সেই হিসাবে ৩ মাসে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৯টি কার্ড বেড়েছে। একইভাবে মার্চ শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৬। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ১৫ হাজার ৮৬১। ফলে ৩ মাসে ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৬২ হাজার ১৮৫।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ক্রেডিট কার্ডে ২৮ হাজার ৯০৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের বছর এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ১৪ হাজার ২৪৬ কোটি, ২০১৯ সালে ১৮ হাজার ৯২৯ কোটি এবং ২০১৮ সালে ১৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিলো।
ক্রেডিট কার্ড হল একটি বিশেষ ধরনের পরিশোধ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কার্ড, যা ওই পরিশোধ ব্যবস্থার ব্যবহারকারীদেরকে ইস্যু করা হয়। এই কার্ডের বাহক পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারেন এবং মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। সাধারণত স্থানীয় ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়ন ভোক্তাদের কাছে এই কার্ডগুলো ইস্যু করে থাকে।
অপরদিকে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে আলোচিত বছরে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ২০২১ সালে যার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০২০ সালে এক লাখ ৭৭ হাজার ৩৫ কোটি, ২০১৯ সালে এক লাখ ৬৭ হাজার ১২৩ কোটি এবং ২০১৮ সালে এক লাখ ৪২ হাজার ৪৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
ডেবিট কার্ড একটি পেমেন্ট কার্ড হিসেবে পরিচিত। যা ব্যবহারে সরাসরি ব্যবহারকারীর কারেন্ট একাউন্ট থেকে অর্থ কেটে নেয়া হয়। এই কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ক্রয়ের পাশাপাশি এটিএম মেশিন থেকে টাকা তোলা ও অথোরাইজড মার্চেন্টের কাছে পেমেন্ট করা যাবে। সহজ ভাষায় ডেবিট কার্ড দিয়ে কেনা সেবা বা পণ্যের অর্থ সরাসরি ব্যাংক একাউন্ট থেকে কেটে নিবে।
সঙ্গে করে নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহকদের অনেকে কার্ড ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার শাখায় গিয়ে লাইন ধরে লেনদেন করতে বাড়তি সময় লাগে। এছাড়া ব্যাংকিং সময়ের বাইরে যে কোনো লেনদেনের সুবিধার কারণে এখন কার্ড লেনদেনে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এখনো দেশের মানুষের বড় অংশের ব্যক্তিগত লেনদেন নগদ টাকায় সম্পন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমেও প্রতি মাসে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ডিজিটাল লেনদেনে আগ্রহী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। ক্যাশলেস লেনদেন আরও এগিয়ে নিতে কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন উৎসাহিত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলা কিউআর’ ব্যবহার করে এক ব্যাংক বা এমএফএস থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক টাকা পরিশোধ করতে পারছেন। বিশেষ করে ফুটপাথ বা ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা কিউআরে বিল নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
এদিকে দেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আবেদন গ্রহণও শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সকল কাজ হবে প্রযুক্তি নির্ভর। ব্যাংকটি আমানত গ্রহণ, ঋণ দেয়া থেকে অন্যান্য সব কাজই করবে।
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনা মহামারী লকডাউনের দুই বছর পর জীবন স্বাভাবিক হওয়ার সময় থেকে লেনদেন বেড়েছে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এখনও নগদ অর্থ ব্যবহার করেন। তবে প্রতিদিনের লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার কমছে।
তারা বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির কারণে ই-কমার্স লেনদেন অনেক কমে গেছে। নাহলে কার্ড লেনদেন আরও বেড়ে যেত।