মণিপুর নিয়ে বুধবার লোকসভার অনাস্থা বিতর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, মণিপুরে বিজেপি ভারত মাতাকে খুন করেছে।
কোনও সন্দেহ নেই রাহুলের এই মন্তব্য খুবই গুরুতর অভিযোগ। সাম্প্রতিককালে সরকার কিংবা শাসকদলের বিরুদ্ধে এমন তীক্ষ্ণ আক্রমণের নজির নেই।
অবশ্য এটা জানাই ছিল যে রাহুল সহ কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা মণিপুর নিয়ে সরব হবেন। মঙ্গলবার অনাস্থা বিতর্কের সূচনা করতে গিয়ে কংগ্রেসের লোকসভার উপনেতা গৌরব গগৈ জানিয়ে দেন মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মৌনতা ভাঙতেই তারা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন।
মঙ্গল ও বুধবারের অনাস্থা বিতর্ক থেকে পরিষ্কার বিরোধীদের সমালোচনার মোকাবিলায় কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলতে চায় শাসক পক্ষ। কারণ কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালে উত্তর-পূর্ব অনেক বেশি অশান্ত ছিল। বিজেপি সাংসদদের অভিযোগ, কংগ্রেসের বিভাজনের নীতির কারণেই মণিপুর আজ অশান্ত
প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার অনাস্থা বিতর্কের জবাবে ভাষণে কি বলবেন? তিনি কি শুধুই প্রতি আক্রমণের পথ ধরবেন, নাকি জাতি দাঙ্গা, ১৬০ জন নাগরিকের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা চাইবেন। এই ব্যাপারে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলয়ের অফিসারেরা ছাড়া কারও পক্ষেই আগাম আঁচ করা কঠিন। তবে মণিপুরের প্রেক্ষাপটে দেখে নেওয়া যেতে পারে অতীতের বেশ কিছু অশান্ত ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল।
যেমন সাম্প্রতিক অতীতে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানের একাংশের কৃষকদের রাজপথে নেমে আন্দোলন এবং বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী কখনও দুঃখ বা সমবেদনা প্রকাশ করেননি। তিনি আচমকাই একদিন দূরদর্শন ও আকাশবাণীতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আইন তিনটি প্রত্যাহারের কথা বলেন। কিন্তু সেখানেও প্রধানমন্ত্রী শত শত কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনও ধরনের অনুশোচনা বা সমবেদনা প্রকাশ করেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন আইন তিনটি
আসলে, নরেন্দ্র মোদীর গত সাড়ে নয় বছরের জমানাকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে দেশের অনেক অস্থির ঘটনা নিয়েই তিনি নীরব থেকেছেন। তার একটি কারণ হতে পারে যে তিনি এটা দেখাতে চান দেশের স্বার্থে অনেক বড় বড় বিষয় নিয়ে তিনি ব্যস্ত। তিনি ভারতকে বিশ্ব গুরু হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যস্ত। তিনি দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যস্ত। তাই কোথায় কী হচ্ছে এসব নিয়ে তার ভাবার বা মন্তব্য করার সময় নেই।
২০১৪ -র লোকসভা ভোটের প্রচারে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে ‘মৌনী মনমোহন’ বলে বারেবারে কটাক্ষ করেছেন। এ কথা ঠিক আগের প্রধানমন্ত্রীদের তুলনায় মনমোহন খুবই কম কথা বলতেন। আসলে তিনি তো আর পাঁচজনের মত রাজনীতিক ছিলেন না। তিনি একজন দক্ষ, কৃতি অর্থনীতিবিদ ছিলেন। কিন্তু সেই মনমোহন কথায় কথায় মুখ না খুললেও সমবেদনা জ্ঞাপনের অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নির্ভয়ার উপর পাশবিক আচরণের ঘটনায় দেশ উত্তাল হয়েছিল। সিঙ্গাপুরের হাসপাতাল থেকে নির্ভয়ার দেহ যখন মাঝরাতে দিল্লি বিমানবন্দরের আসে সেই রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নিরাপত্তার কড়াকড়ি, প্রটোকল ভেঙে মেয়েটির বাবা-মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।