২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৭:৫২:৪৮ অপরাহ্ন


সরকারের অর্জন তুলে ধরতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৮-২০২৩
সরকারের অর্জন তুলে ধরতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ File Photo


টানা দেড় দশক, অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো তুলে ধরতে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী বিভাগ থেকে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারের চিঠি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

 

পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন কমিশন ও পিএসসির মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃথক সত্তা রয়েছে। সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সরকারপ্রধানের অফিস থেকে যেভাবে নির্দেশনা দিতে পারে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া উচিত নয়। কারণ, সাংবিধানিক বা আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাহী বিভাগের অধীন নয়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সমকালকে বলেন, এ ধরনের চিঠি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া উচিত নয়। কারণ, কমিশন এখন আর নির্বাহী বিভাগের অংশ নয়। এমন চিঠি নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত বিষয়টি সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়া, যাতে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতো নির্বাচন কমিশনকে মনে না করা হয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও লেখক ফিরোজ মিয়া বলেন, সরকার নির্দেশিত উন্নয়নকাজ প্রচারে নির্বাচন কমিশন  অংশ নিলে বিষয়টি পক্ষপাতদুষ্টের তকমা পাবে। তাই এ ধরনের চিঠি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন ও পিএসসির মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, এমনিতেই নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণে বেগ পেতে হচ্ছে। এমন সময় সরকারের উন্নয়নকাজের প্রচার তারা করলে সেটি জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নমূলক কাজ প্রচারণায় তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উদ্যোগ নিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক শাহিদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক পত্রে সরকারি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রচারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণার লক্ষ্যে ২০০৯-২০২৩ সময়কাল পর্যন্ত প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগের আওতাধীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশিত প্রকল্পসহ রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় বাস্তবায়িত-বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প, কর্মসূচি, উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন ও ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কিত তথ্য বই আকারে প্রকাশপূর্বক মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা প্রয়োজন। এসব তথ্য বই আকারে প্রকাশ করে মাঠ পর্যায়ে দ্রুত বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের নিজের অর্জনগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই এমন নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের উন্নয়নকাজের বছরওয়ারি প্রকাশনা একত্র করে সেগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নকাজগুলো প্রচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সচিব জানান, গত সচিব সভার বৈঠকেও একই নির্দেশনা মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার টানা দেড় দশকের উন্নয়নকাজে অনেক বড় মাইলফলক অর্জন করেছে। এসব বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সমকালকে বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বছরব্যাপী সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের চলমান একটি কাজের অংশ। এখন নতুন নির্দেশনা আসার পর একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা মন্ত্রণালয়ের যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে, তা লিপিবদ্ধ করে প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন।