জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন, ‘মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের এত বছর ধরে আশ্রয় প্রদান করে যাওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রেস ব্রিফিংকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। চলতি মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছে। সে উপলক্ষে চলমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদে তাদের প্রাধিকার নিয়ে অবহিত করার জন্য এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধিকার তালিকায় আছে বলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির ব্যাপারে আমরা খুবই সজাগ রয়েছি। আমরা জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি রোহিঙ্গা ইস্যুতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। আমার এজেন্ডায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ব্যাপারটি রয়েছে। ক্যাম্প (কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প) পরিদর্শন করে সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্বের কাছে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব।’ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন প্রশাসনের মন্ত্রী মর্যাদার এই রাষ্ট্রদূত।
ব্রিফিংকালে বাংলাদেশ প্রতিদিন উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টকে অবহিত করে বলে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে ‘সংঘাতজনিত খাদ্য সংকটের’ ওপর এক উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে, যার সভাপতিত্ব করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনি ব্লিঙ্কেন। চলমান সংঘাত কীভাবে বিশ্বের খাদ্যব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে সে নিয়ে দিনব্যপী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে এবং এই বিতর্কের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদ এ সংকট উত্তরণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। মিয়ানমারে নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসা ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। এখনো মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এবং এ যাবৎ একজন রোহিঙ্গাও সেখানে ফিরতে পারেননি। যদিও মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে আন্তর্জাতিক অংশীজন এবং জাতিসংঘের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদেরকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে, কিন্তু ইউক্রেন সংকটসহ চলমান অন্যান্য সংঘাত এবং একাধিক মানবিক জরুরি পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য দাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়ন উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক অংশীদাররা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য অর্থায়নে ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুবার রেশন কাটার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। প্রথমে জনপ্রতি ১২ থেকে ১০ ডলার এবং এরপর জুন মাসে ১০ থেকে মাত্র ৮ ডলারে নামাতে হয়েছে। এর অর্থ হলো, একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী তার খাদ্য গ্রহণের জন্য প্রতিদিন মাত্র ২৭ সেন্ট করে পাচ্ছেন। এই অর্থায়ন ঘাটতি রোহিঙ্গাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে। এর ফলে অপুষ্টি, সহিংসতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এ সময় বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ যেখানে নিজেই বিদ্যমান জলবায়ু সংকট ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তার জনগণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়ে বিশ্বব্যপী সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে যাতে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেন এবং তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কীভাবে তাদের জন্য পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস রোহিঙ্গা পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধিকার তালিকায় আছে বলে জানান। লিন্ডা থমাস বলেন, ক্যাম্প পরিদর্শন করে তিনি সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চান। এ ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।