২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৭:৩২:৫৬ অপরাহ্ন


দুদকের মামলায় তারেকের ৯ জুবাইদার ৩ বছরের কারাদণ্ড
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৮-২০২৩
দুদকের মামলায় তারেকের ৯ জুবাইদার ৩ বছরের কারাদণ্ড File Photo


জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুই ধারায় নয় বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত তারেক রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া তারেক রহমানকে ৩ কোটি ও জুবাইদা রহমানকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এদিকে এ রায়ের প্রতিবাদে আজ মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ এবং আগামীকাল ঢাকায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি।

 

ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান গতকাল এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। গত ২৭ জুলাই আদালত এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য গতকালের দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ২৪ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। ওইদিন তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল একই আদালত তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২)/২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন। ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। অন্যদিকে তারেক ও জুবাইদা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীর শুনানি করার আইনি সুযোগ ছিল না। মামলাটি নিয়ে শুরু থেকে বিএনপি অভিযোগ করে আসছিল। তাদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো রায় হচ্ছে। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং আদালতের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। 

এ মামলার রায় ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। তার মধ্যেই আদালতের বাইরে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, ঢাকা বার ইউনিটের ব্যানারে আয়োজিত এ বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল—‘তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা মিথ্যা রায় মানি না, মানব না।’ রায়ের পর আবারো মিছিলে নামেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় তারা স্লোগান দেন—‘ফরমায়েশি রায় মানি না।’

আদালতে রায় ঘোষণার পর পরই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। আগামীকাল বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে তারা। 

সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম জানান, শুক্রবার বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে। এছাড়া রায়ের প্রতিবাদে যৌথভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আজ দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে। গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। 

এদিকে এ রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের ফরমায়েশি রায়ের আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে সাজা দেয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারো মনে হয়নি। বিচার বিভাগের দলীয়করণের এটা আর একটি নিকৃষ্ট নজির। তারেক রহমান এবং তার স্ত্রীকে যে সাজা দেয়া হবে, এ নিয়ে কারো সংশয় ছিল না। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আওয়ামী সরকার তাদের কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। তাই আইন-আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। আজ (গতকাল) এ ফরমায়েশি রায় দেয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্রশূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।’

সংবাদ সম্মেলনে মামলার অভিযোগে সম্পদের যেসব বিবরণী দাখিল করা হয়েছে তা মিথ্যা, কাল্পনিক, সাজানো ও ভিত্তিহীন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ রায় যে শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক হয়েছে তার বড় প্রমাণ আদালতে প্রায় ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোর গতিতে চলেছে এ মামলার কার্যক্রম। রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে আদালতে। এক মাসে এ মামলাটির জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুতগতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের অস্বাভাবিক বিচারকার্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তাদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। গোটা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছে কীভাবে তামাশার বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে। আজকের ফরমায়েশি রায় সরকারপ্রধানের হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।’

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তারেক রহমানের শাশুড়ি মারা যাওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরের বছর তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।