প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আছে যে তারা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবে।’
সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (এসসি) প্রাঙ্গণে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কার্যক্রম উদ্বোধনের পর যেখান থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থানটিকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৬৯ জন আইনজীবীর নাম স্মৃতিস্তম্ভে খোদাই করা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এরই মধ্যে তাঁর কার্যক্রমকে ডিজিটাইজ করেছেন এবং অনলাইনে মামলার কার্যতালিকা, রায় ও মামলার বিবরণ রয়েছে, যার মাধ্যমে কেউ বিদেশে অবস্থান করেও তার মামলার বর্তমান পরিস্থিতি সহজেই জানতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিচার
বিভাগকে স্মার্ট করার পথে বেশ এগিয়ে থাকায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ভার্চুয়াল আদালত স্থাপন করেছে। সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দেশের সব আদালতে দরিদ্র ও অসচ্ছল বাদী-বিবাদীদের জন্য আইনি সহায়তা চালু করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এসব ব্যবস্থা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথকে সহজ করেছে।’
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতির চাকা যেন কখনোই থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবার সমর্থন দরকার।
গত সাড়ে ১৪ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে।’
আগামী দিনে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক অধিকার, আর্থ-সামাজিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রাধান্য পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে।
একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একটি প্রকাশনা ‘আমাদের বিচারালয়’-এর মোড়কও উন্মোচন করেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যের হত্যার বিচার করার মাধ্যমে তাঁর সরকার অপরাধীদের রেহাই দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেতে আমার ৩৫ বছর লেগেছে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আমি এটি পেয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তাঁর সরকার সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান, যার ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয় এবং গণতন্ত্রের পথ হয় মসৃণ। সেনানিবাসের দখলকৃত ক্ষমতা এই রায়ের মাধ্যমে জনগণের হাতে তুলে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। তিনি বলেন, ‘এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করেছে, ফলে এই রায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন স্নাতকদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁরা বাংলাদেশে একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন।