শহরে যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, সেসব সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে যাবে। আওয়ামী লীগ সরকারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’। ১৫টি পাইলট গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজতর করার লক্ষ্যে একনেক সভায় ‘আমার গ্রাম-আমার শহর : পাইলট গ্রাম উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি উচ্চ আদালতের কর সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তিনি বলেন, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প পাইলট হিসেবে ১৫টি গ্রাম বাছাই করা হয়েছে। ওই সব গ্রামের ফলাফল দেখে অন্য গ্রামে অনুসরণ করতে বলেছেন তিনি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় করতে নির্দেশনা দিয়েছেন একনেক চেয়ারপারসন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৮০০ কোটি কোটি টাকা। দেশের ১৫টি জেলার ১৫টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত ১৫টি পাইলট গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজতর করার লক্ষ্যে জনসম্পদ সৃজনে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১০টি উপজেলার মহা-পরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রণয়ন/হালনাগাদের মাধ্যমে সারাদেশে সকল উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা।
২০৪১ সালের মধ্যে পরিকল্পিত ও জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই-উন্নত দেশ বিনির্মাণে মাঠ পর্যায়ের মহা-পরিকল্পনা প্রণয়ন করার পাশাপাশি আমার গ্রাম-আমার শহর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব আহরণ, গ্রাম সহায়ক নীতি কাঠামো প্রয়োগ, স্বেচ্ছাসেবার অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নগর পরিষেবা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সেবাসমূহ পাইলট গ্রামসমূহের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া পাইলট গ্রাম প্রকল্পের অধীনে সম্পাদিত কার্যাবলীর এবং আহরিত জ্ঞান সারাদেশে প্রয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত জ্ঞান ব্যবস্থাপনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন এবং ডকুমেন্টেশন করা হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম সড়ক উন্নয়ন (মাটির কাজ; ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন নির্মাণ; প্রতিরক্ষা ইত্যাদি); গ্রোথ সেন্টার, গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন এবং কৃষিপণ্য কালেকশন সেন্টার নির্মাণ; পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ; উপজেলা বহুমুখী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ; বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ উন্নয়ন; গ্রামীণ আবাসন উন্নয়ন; খাল ও পুকুর খনন; গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়ন, সড়ক বাতি স্থাপন, বন্ধু চুলা ও বায়োগ্যাস প্লান্ট সরবরাহ; সামাজিক বনায়ন এবং ভিলেজ ব্র্যান্ডি।
একনেকে ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন ॥ একনেকে ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ১৯২ কোটি সাত লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন পাঁচ হাজার ২৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ‘সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন’ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে প্রকল্পটি আজ একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ৩৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় (ইউনিয়ন- মোল্লারগাঁও; মৌজা- গোয়ালগাঁও ও হাজরাই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন’ প্রকল্প, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (দ্বিতীয় পর্যায়)’, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন’, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘জিনাই, ঘাঘট, বংশী এবং নাগদা নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণ’, নৌ-পথের উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘উলিপুর (হেলিপ্যাড মোড়)-চিলমারি (গুনাইগাছ) সংযোগ সড়ক নির্মাণ’, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি ভবনসমূহের রেজিলিয়েন্সির (স্থিতিস্থাপকতা/সহনশীলতা) জন্য ডিজাইন এবং নির্মাণ এর গুণগতমান বৃদ্ধিকরণ’, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য রেকর্ড ভবন নির্মাণ।’ এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশি। যার ফলে এর প্রভাব প্রকল্প ব্যয়ের ওপর পড়েছে। এ জন্য রেট সিডিউল পরিবর্তন করা হবে। এ ছাড়া সরকারের উচ্চ আদালতের কর সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ’ এবং ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন’, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প ‘ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উড়িরচর নোয়াখালী ক্রস ড্যাম নির্মাণ’ প্রকল্প ও ‘চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং-৭২ এর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ’ এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ।’ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিবেশ রক্ষা করে উপকূল নিয়ে সাবধানে প্রকল্প নিতে হবে। কৃষিমন্ত্রীকে মৌসুমি সবজি ও ফল সংরক্ষণের প্রকল্প নিতে বলেছেন সরকারপ্রধান। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়হীনতা দূর করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।