গল্পটা এখনও হয়ত অনেকেই একবাক্যে চিনতে পারবে।
শিল্পী সুখময় সেন। বয়স পঁয়ত্রিশ। পেশায় এবং পরিচয়ে সে একজন শিল্পী। পোর্ট্রেট বা মনুষ্যাবয়ব আঁকায় তার অসামান্য খ্যাতি। এদিকে সে চায়, একটু স্বাদবদল করতে। প্রকৃতিকে ক্যানভাসে ধরার লক্ষ্যেই সে হাজির হয় শিলঙে। আর সেখানেই তার আলাপ হয় ইনশিওরেন্স কোম্পানির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার গণেশ মুৎসুদ্দির সঙ্গে। যিনি এক আজব অনুরোধ করেন সুখময়কে।
‘ব্যাপারটা হল এই— আপনি আমার একটা ছবি আঁকুন, কিন্তু সেটা হবে এখনকার চেহারা নয়। আজ থেকে ঠিক পঁচিশ বছর পরে আমার যে চেহারা হবে, সেইটে আপনাকে অনুমান করে আঁকতে হবে’, বলেছিলেন গণেশ মুৎসুদ্দি। এমনই অনুরোধ, পাঠককে অবধি একবার থমকে যেতে হয়। ১৯৭০ সালের ১৫ অক্টোবর ছবি আঁকতে হবে একজনের, ১৯৯৫ সালে তাঁকে কীরকম দেখাবে, সেইটে ভেবে নিয়ে।
তারপরের গল্প এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়। ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় এই বিখ্যাত গল্পটি লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায় ‘গণেশ মুৎসুদ্দির পোর্ট্রেট’। আর আজ, এই ২০২৩ সালে এসে এ’হেন সুখময় সেনদেরই জায়গা নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের রূপ, কাকে কেমন দেখাবে সেই ছবি!
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ‘শাহিদ’ নামক এক ব্যবহারকারী পোস্ট করেছেন এমনই কিছু ছবি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার প্রযুক্তিতে আগ্রহী ‘শাহিদ’ বিভিন্ন বলিউড তারকাকে বৃদ্ধ বয়সে কেমন দেখাবে, চেষ্টা করেছেন সেটা তুলে ধরার। ব্যবহার করেছেন ‘মিডজার্নি’ নামক এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রোগ্রাম। উঠে এসেছেন দীপিকা পাডুকোন (Deepika Padukone), ক্যাটরিনা কাইফ, আলিয়া ভট্ট, অনুষ্কা শর্মা, শ্রদ্ধা কাপুরদের মত অনেকে।
বয়স বাড়লেও, অভিনেত্রীদের ব্যক্তিত্ব বা সৌন্দর্যের আবেদনে কিন্তু ভাঁটা পড়েনি একটুও। বস্তুত, এই প্রোগ্রাম-সৃষ্ট ছবিগুলিতে এটাই বারবার দর্শককে বিমোহিত করে। বয়স বেড়েছে, চুলে পাক ধরেছে তাঁদের, ত্বক কুঞ্চিত হয়েছে, তবু তাঁদের চাহনিতে মুগ্ধ করা ব্যক্তিত্বের আভা যেন আবছাভাবে ফুটে আসছে সামনে। কৃতি শ্যাননের মুখে রয়েছে একটা বিরক্তি, শ্রদ্ধা কাপুরের মুখে কারুণ্য, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে দেখা যাচ্ছে অবাক, প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে চিন্তিত। বিবিধ তার প্রকাশ, বিচিত্র তার ভাব।
তবে ‘শাহিদ’-এর দ্বিতীয় পোস্টটি প্রথমটির চেয়েও বেশি আলোড়ন ফেলেছে। দেখা যাচ্ছে নায়কদের। রণবীর কাপুরকে দিয়ে শুরু। চুলের রেখা পাতলা হয়েছে, কপালে চামড়া কুঁচকোনো। হৃতিক রোশনের গাম্ভীর্যে আলাদাই এক দীপ্তি। রয়েছেন দক্ষিণি তারকা আল্লু অর্জুন। তাঁর চোখের মাহাত্ম্য প্রায় অটুট, অপরিবর্তিত। আমির খান ও সলমন খানের ‘লুক’ কার্যত তীক্ষ্ণধী কোনও বৃদ্ধের রূপ নিয়েছে।
তবে এই তালিকায় সবচেয়ে অসামান্য উপস্থিতি বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের। পাঞ্জাবি, জহর কোটে, পাকা চুল আর দাড়িতে শাহরুখের অবয়বে যেন তখনও উপস্থিত ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অলিখিত বাদশা। যাকে ইংরেজিতে বলে, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট!’