২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৫:০৪ পূর্বাহ্ন


জাতির পিতার সমাধিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৩
জাতির পিতার সমাধিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা ফাইল ফটো


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস’ গতকাল শুক্রবার যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গোটা জাতির পক্ষ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ সমাধি সৌধের বেদির পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন, এরপর সুরা ফাতেহা পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধু ও ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় তারা দোয়া ও মোনাজাত করেন। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমাধি সৌধে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা দোয়া ও মোনাজাত করেন।
রাষ্ট্রপতির পতœী রাশিদা খানম, ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক এমপি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানান। পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
দুপুরে বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধের পাবলিক প্লাজায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, স্বাগত ভাষণ দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং শিশুদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন স্বপ্নিল বিশ্বাস। শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে শিশু রুবাবা তোহা জামান ও এ এল শরফুদ্দিন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানমালার শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন এবং জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর কুইজ-আবৃত্তি, সাহিত্য-সংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের লেখা ‘শিশুদের শেখ মুজিব’ শিরোনামের একটি সচিত্র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত সেরা চিত্রকর্মটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক হিসেবে উপহার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে ১০০ অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে ২৫০০ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধে ৩ দিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করেন। পরে তিনি স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে ৭ম বারের মতো পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া আসেন। পরে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ টুঙ্গিপাড়া পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। বিকাল ৪টা ১৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।
রঙিন সাজে টুঙ্গিপাড়া : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে রঙিন পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ দিয়ে টুঙ্গিপাড়াকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। সর্বত্রই বিরাজ করছিল উৎসবের আমেজ ও সাজসাজ রব। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছিল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। শিশু সমাবেশের শুরুতে ‘শুভ শুভ শুভ দিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন’ ধ্বনিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়া মুখরিত হয়ে ওঠে। শিশু-কিশোর সমাবেশে গোপালগঞ্জের শিশুদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে।
প্রার্থনা সভা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার প্রধান প্রধান মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। গোপালগঞ্জ কেন্দ্রীয় সার্বজনীন কালিবাড়ীতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, শাস্ত্রপাঠ ও ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
এদিকে শহরের শেখ রাসেল শিশু পার্কসংলগ্ন লোকনাথ মন্দিরে প্রার্থনা সভা, বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ¦ালন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয় বলে মন্দিরের পূজারি খোকন কর্মকার জানিয়েছেন।