ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য অ্যাট ৫০ : অ্যাস্পায়ারিং উইমেন অ্যান্ড গার্লস এজেন্ডা ২০৩০’ শীর্ষক এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ মন্ত্রী, হাউস অব লর্ডস এবং হাউস অব কমন্সের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ উদযাপনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের মিনিস্টার ফর লন্ডন এবং সায়েন্স, ইনোভিশন ও টেকনোলজি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পল স্কালি এমপি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর নারী শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত মিসেস হেলেন গ্রান্ট এমপি, স্যাডো মিনিস্টার ফর এশিয়া ও প্যাসিফিক ক্যাথরিন ওয়েস্ট এমপি, বাংলাদেশের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান রুশনারা আলী এমপি, বাংলাদেশের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের ভাইস চেয়ার আফজাল খান এমপি, তাহির আলি এমপি, লর্ড ধোলাকিয়া, লর্ড রামি রেঞ্জার, ডেপুটি লিডার অব লেবার লর্ডস এবং পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক স্যাডো মিনিস্টার লর্ড কলিন্স, লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির ডেপুটি লিডার ডেইজি কুপার এমপি, মেম্বার অব জাস্টিস এন্ড হোম অ্যাফেয়ার্স ব্যারনেস প্রাশার, ব্যারনেস ভেরমা, ব্যারনেস পলা উদ্দিন ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের নারী রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, নেতৃস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্কের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, সুশীল-সমাজ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সদস্যরা অনুষ্ঠানে আংশগ্রহণ করেন। এই বিশেষ অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক ছিলেন কনজারভেটিভ পিয়ার লর্ড পোপাট।
নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নকে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম এজেন্ডায় পরিণত করেছেন। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। এজন্য তিনি ২০১৬ সালে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ এবং ‘প্ল্যানেট ৫০:৫০ চ্যাম্পিয়ন’ আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছেন।”
শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে মেয়েদের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য অংশীদারিত্বের আলোকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশি মেয়েদের জন্য একটি দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প চালু করার জন্য প্রতিমন্ত্রী যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যের মিনিস্টার ফর লন্ডন এবং সায়েন্স, ইনোভিশন ও টেকনোলজি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পল স্কালি এমপি নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃতের প্রশংসা করে তা অনেক দেশের জন্যই অনুসরণীয় বলে মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্ত স্টেরিওটাইপ ভেঙে বাংলাদেশের ৯ কোটি নারীর ক্ষমতায়ন করছেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে ১৯৯৭ সালে প্রথম ও ২০১১ সালে দ্বিতীয় জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার কন্যাশিশুর শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য নারীর ক্ষমতায়ন এবং মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে যৌথভাবে কাজ করছে। এই অংশীদার ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী হবে।’ তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নিজেদের দেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীদের সুরক্ষায় অব্যাহত সমর্থনের জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
হাইকমিশনার যুক্তরাজ্যের রাজনীতি, বিচার বিভাগ, ব্যবসা, খেলাধুলা, মিডিয়া এবং আতিথেয়তা শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারীদের অসামান্য সাফল্যের জন্য প্রশংসা করেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর নারী শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত মিসেস হেলেন গ্রান্ট এমপি কন্যাশিশুদের শিক্ষাকে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রধান উপায় হিসেবে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের এফসিডিও-এর ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান ওশান ডাইরেক্টরেটের ডেপুটি ডিরেক্টর মায়া শিভগনানাম যুক্তরাজ্যের নারী বিষয়ক মন্ত্রী মারিয়া কলফিল্ডের একটি বিবৃতি পাঠ করেন। বিবৃতিতে মন্ত্রী কলফিল্ড নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রযাত্রার প্রশংসা করেন এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্কুলে মেয়েদের শিক্ষার জন্য বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
লর্ড পোপাট বাংলাদেশের নারীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনগত এবং সামাজিকভাবে ক্ষমতায়নে যুগান্তকারী নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার আলম যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী পল স্কালি, হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম এবং বিশিষ্ট অতিথিদের নিয়ে বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে অসাধারণ অবদানের জন্য শেরি ব্লেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শেরি ব্লেয়ারকে ‘বঙ্গবন্ধু-থমাস উইলিয়ামস কিউসি ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ প্রদান করেন।
পুরস্কার গ্রহণের পর শেরি ব্লেয়ার বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নারীর শক্তিতে দৃঢ় বিশ্বাসী যিনি তাঁর বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নারীরা যাতে নিজ দেশের সম্পদ ও সুযোগের ন্যায্য অংশ পায় সেজন্য তাদের ক্ষমতায়ন করছেন।’