সরকারি ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মধ্যমেয়াদে সরকারি ব্যয় আগামীতে জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ‘সরকার ক্রমান্বয়ে জিডিপির শতাংশ হারে ব্যয় বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপির ১৩ শতাংশ, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে(সংশোধিত বাজেটে) ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’ দাবি করা হয়েছে, ‘সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। ’
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি আমার বাজেট তৈরি করতাম তবে চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার অবশ্যই তা সাত লাখ কোটি টাকার বেশি হতো। কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। শেষমেশ বাজেটের আকার ছয় কোটি ৭৮ লাখ ২৪ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকানো গেছে। এর অন্যতম কারণ, সম্পদের স্বল্পতা, এক দিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আশানুরূপ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য দিকে, বিদেশী সাহায্য কাক্সিক্ষত হারে আসছে না। বিশেষ করে গত দুই বছরে কোভিডজনিত কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়। ফলে আয় ভালো না হওয়ার কারণে সরকারের পক্ষে ব্যয়ও বেশি করা সম্ভব হয়নি।
সরকারের আয় যে আশানুরূপ বাড়ছে না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জিডিপির শতাংশ হিসেবে এনবিআর অবদান বছরের পর বছর ধরে সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপির শতাংশে এনবিআর অংশ ছিল সাড়ে ৭ ভাগ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এটি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ভাগে। কিন্তু পরে তা সংশোধন করে আট দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। একই চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এই হার ধরা হয়েছে আট দশমিক ৩ শতাংশ, পরবর্তী ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রাক্কলন করা হয়েছে যথাক্রমে আট দশমিক ৮ শতাংশ ও ৯ শতাংশ। তবে প্রাক্কলন যাই করা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই হার অর্জন করাও দুরূহ হয়ে পড়বে।
অর্থ বিভাগ ও আইএমএফ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি ব্যয় জিডিপির শতাংশে ২০ ভাগের উপরে ছিল । এর মধ্যে, ফ্রান্সের ৫৭ শতাংশ, সুইডেন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ৩৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৩৬ শতাংশ ৮ শতাংশ, চীন ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারত ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়া ২২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ভিয়েতমান ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।