০৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:১৪:০৬ পূর্বাহ্ন


সরকারি ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৩-২০২৩
সরকারি ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ ফাইল ফটো


সরকারি ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মধ্যমেয়াদে সরকারি ব্যয় আগামীতে জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ‘সরকার ক্রমান্বয়ে জিডিপির শতাংশ হারে ব্যয় বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপির ১৩ শতাংশ, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে(সংশোধিত বাজেটে) ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’ দাবি করা হয়েছে, ‘সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। ’

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সরকারি ব্যয় অনেক কম।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে যেখানে বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপির ১৩ শতাংশ, সেখানে ভারত, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামে তা ছিল যথাক্রমে ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ, ২২.৩ শতাংশ এবং ২০.৪ শতাংশ। তা ছাড়া, উন্নত অর্থনীতিতে সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি’। আগামীতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে অর্থমন্ত্রণালয়। আর এ জন্য রাজস্ব বা আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

জানা গেছে, গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি ব্যয় (বাজেট) ২ শতাংশ কমে গেছে। খোদ অর্থমন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ‘জিডিপি’র (মোট দেশজ উৎপাদন) শতকরা হিসেবে বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় বর্তমানে কিছু উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় কম।
অর্থমন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি এবং গুণগত ও মানসম্পন্ন সরকারি সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মৌলিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষেবা খাতসমূহে ব্যয় বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সরকারি ব্যয়ের আকার বৃদ্ধি এবং একই সাথে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল জিডিপির শতাংশ হিসেবে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি আমার বাজেট তৈরি করতাম তবে চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার অবশ্যই তা সাত লাখ কোটি টাকার বেশি হতো। কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। শেষমেশ বাজেটের আকার ছয় কোটি ৭৮ লাখ ২৪ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকানো গেছে। এর অন্যতম কারণ, সম্পদের স্বল্পতা, এক দিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আশানুরূপ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য দিকে, বিদেশী সাহায্য কাক্সিক্ষত হারে আসছে না। বিশেষ করে গত দুই বছরে কোভিডজনিত কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়। ফলে আয় ভালো না হওয়ার কারণে সরকারের পক্ষে ব্যয়ও বেশি করা সম্ভব হয়নি।

সরকারের আয় যে আশানুরূপ বাড়ছে না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জিডিপির শতাংশ হিসেবে এনবিআর অবদান বছরের পর বছর ধরে সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপির শতাংশে এনবিআর অংশ ছিল সাড়ে ৭ ভাগ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এটি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ভাগে। কিন্তু পরে তা সংশোধন করে আট দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। একই চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এই হার ধরা হয়েছে আট দশমিক ৩ শতাংশ, পরবর্তী ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রাক্কলন করা হয়েছে যথাক্রমে আট দশমিক ৮ শতাংশ ও ৯ শতাংশ। তবে প্রাক্কলন যাই করা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই হার অর্জন করাও দুরূহ হয়ে পড়বে।

অর্থ বিভাগ ও আইএমএফ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি ব্যয় জিডিপির শতাংশে ২০ ভাগের উপরে ছিল । এর মধ্যে, ফ্রান্সের ৫৭ শতাংশ, সুইডেন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ৩৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৩৬ শতাংশ ৮ শতাংশ, চীন ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারত ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়া ২২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ভিয়েতমান ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।