কাতারের দোহায় হয়ে গেলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) সম্মেলন। বর্তমানে ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশ জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছে। ১৯৮০ সাল থেকে ১০ বছর পরপর নিয়মিতভাবে এই সম্মেলন আয়োজন করে আসছে জাতিসংঘ। কোভিডের কারণে এবার সম্মেলনটি দুই বছর পিছিয়ে ১২ বছর পর হলো। আনন্দের বিষয় হলো, এবারের সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাংলাদেশ। বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত অন্য দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ একটি রোল মডেল। কারণ মাত্র ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, গ্র্যাজুয়েশন অর্জনের জন্য আবশ্যক সবক’টি সূচকে বাংলাদেশ অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে, যা সবার কাছেই বিস্ময়।
খুব অসাধারণ বিষয় ছিল, এবারের সম্মেলনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে ‘ট্রান্সফরমেশনাল লিডারশিপ’। যার অর্থ হলো, একজন নেতা তার মেধা ও দক্ষতা দিয়ে নিত্য-নতুন উদ্ভাবনাময় লক্ষ্য ঠিক করে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে এগিয়ে নেবেন। একই সঙ্গে যে কোনও সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ঠিক করে দেবেন। শুধু ‘ট্রান্সফরমেশনাল লিডারশিপ’ই নয়, শেখ হাসিনাকে বলা হয়েছে, ‘ট্রু লিডার’, ‘ভিশনারি লিডার’। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি একটি দেশকে সঠিক পথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। যা সত্যিই একটা দেশের জন্য গর্বের বিষয়।
বাংলাদেশকে বারবার বলা হয়েছে ‘লিডার অব লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ’। কেন বলা হয়েছে– সেই উত্তরও উঠে এসেছে সম্মেলনে।
প্রথমত, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিস্ময়কর। আমাদের জিডিপি ধারাবাহিকভাবে উন্নতির দিকে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনার কারণে বিশ্ব যখন ভুগছে, সেই বিপদের মধ্যেও আমরা লড়াই করতে সক্ষম হয়েছি যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।
দ্বিতীয়ত, মানব উন্নয়নে আমাদের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। গড় আয়ু বৃদ্ধি, মা ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে আমাদের সব উদ্যোগ সফলভাবে কাজে লেগেছে। যেমন, বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে আমাদের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৫ বছর। সেটা ২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী হয়েছে ৭২ বছর। এর মূল কারণ হলো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাবার উৎপাদন ও আর্থ-সামাজিক উন্নতি।
তৃতীয়ত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনেক দেশের কাছেই অনুকরণীয়। বন্যা, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, খরাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার নানান পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। ক্ষতিগ্রস্তরা যেন দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে সেজন্যও আমাদের সরকার ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।