শান্ত সাগরে হঠাৎ ঢেউ উঠেছিল। সেই ঢেউ সাগরিকার গ্যালারি ছাপিয়ে
ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম শহরে। সেখান থেকে হয়তো সারা দেশে। নাজমুল হোসেন শান্ত,
তৌহিদ হৃদয়দের ব্যাটিং তাণ্ডবে টি ২০তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রথম জয় বলে কথা। সব মিলিয়ে টি ২০তে এটি আবার
বাংলাদেশের ৫০তম জয়। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হেলায় হারিয়ে বাংলাদেশ আবারও
প্রমাণ করে দিল ঘরের মাটিতে তারা সত্যিই বাঘ। শেষ চার ওভারে দারুণ
প্রত্যাবর্তনে বোলাররা ইংলিশদের বেঁধে ফেলে ১৫৬ রানে। এরপর আগ্রাসী
ব্যাটিংয়ে ১২ বল হাতে রেখেই বাংলাদেশ তুলে নেয় ছয় উইকেটের দাপুটে জয়। তিন
ম্যাচের টি ২০ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ
চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই সংস্করণ মিলিয়ে টানা দুই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারাল
বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার প্রথম টি ২০’র আগে এই ভেন্যুতেই সিরিজের শেষ ওয়ানডে
জিতেছিল স্বাগতিকরা।
বিপিএলে শান্ত রেকর্ড গড়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। যেখানে তিনি শেষ
করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন আন্তর্জাতিক টি ২০। তার ৩০ বলে আট
চারে ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসেই জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচসেরার
পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। ব্যাটিংয়ে আগে ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত তিনটি ক্যাচ
নিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে শান্ত জানালেন, বিপিএলের আ ত্মবিশ্বাসই তাকে ভালো
খেলতে সাহায্য করেছে।
এর আগে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন বিপিএলে আক্রমণা ত্মক ইনিংস খেলা রনি
তালুকদার ও অভিষক্ত তৌহিদ হৃদয়। প্রায় আট বছর পর টি ২০ দলে ফিরলেন রনি।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকের ঠিক ১০০ ম্যাচ পর
নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামেন এই ডানহাতি ব্যাটার। দুই ম্যাচের মাঝে যা
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিরতি। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেভন
থমাসের বিরতি ছিল ১০২ ম্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে এর আগে ৭৯ ম্যাচের বিরতি নিয়ে
পরের ম্যাচ খেলেছিলেন এনামুল হক বিজয়।
রনি ওপেন করেন লিটন দাসের সঙ্গে। এই লিটনের আগেই ডাক পেয়েছিলেন রনি। লিটন
এখন জাতীয় দলে থিতু। আট বছর পর রনি নতুন জীবনের শুরুটা করলেন নিজের মতো
করে। আদিল রশিদের বলে আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে চার চারে তিনি করেন ২১ রান।
বাংলাদেশের রান তখন ৩.৩ ওভারে ৩৩। পরের ওভার জফরা আর্চারের বলে আউট হন লিটন
(১২)।
এরপর দলকে এগিয়ে নেন শান্ত ও হৃদয়। বিপিএলে যেভাবে জুটি বেঁধেছিলেন,
সেভাবেই সাবলীল ব্যাটিংয়ে উড়ালেন নতুনের কেতন। দুজনের জুটি ছিল ৬৫ রানের।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের শেষ দুই বলে টানা চার মারেন হৃদয়। পাওয়ার প্লে
শেষে স্কোর ৫২/২। পরের ওভারে মার্ক উডকে টানা চারটি বাউন্ডারি হাঁকান
শান্ত। সেখানেই জয়ের ভিত তৈরি হয়ে যায়। হৃদয় থামেন ১৭ বলে ২৪ করে। চার
রানের ব্যবধানে ফেরেন শান্তও। তার আগেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। সবশেষ চার
ম্যাচে এটি শান্তর তৃতীয় ফিফটি। এরপর বাকি পথটা নির্বিঘ্নে পার করেন
অধিনায়ক সাকিব ও আফিফ হোসেন।
ক্রিস জর্ডানকে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন সাকিবই। ২৪ বলে অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। আফিফ করেন ১৫* রান।
এর আগে অবশ্য খলনায়ক হওয়ার শঙ্কায় ছিলেন সাকিব। তার ক্যাচ মিসেই যে জীবন
পান ইংল্যান্ড অধিনায়ক বাটলার। এরপর চালান তাণ্ডব। নাসুম আহমেদের বলে মিড
অনে সহজ ক্যাচ মিস করেন সাকিব। বাটলার তখন ১৯ রানে ছিলেন। তার দুই বল আগেই
নাসুম ফিল সল্টের ফিরতি ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন। এক ওভারে ইংল্যান্ডের দুই
ব্যাটার জীবন পেয়ে আক্রমণা ত্মক হয়ে ওঠেন। সল্ট আউট হন ৩৫ বলে ৩৮ করে। দশ
ওভারে ওপেনিং জুটি ভাঙে ৮০ রানে। এরপর বাটলার ছাড়া কেউ উইকেটে থিতু হতে
পারেননি। হাসান মাহমুদকে ছক্কা মেরে ৪৪ থেকে ফিফটি পূর্ণ করেন বাটলার। পরের
বলে আরেকটি ছক্কা।
এই হাসানই পরের স্পেলে এসে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। প্রথম বলেই ফেরান সেই
বাটলারকে। ৪২ বলে বাটলার করেন ৬৭। এর আগের ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটকে
ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। টানা দুই বলে ইংল্যান্ড হারায় দুই উইকেট। ১৬
ওভারে তাদের রান ছিল ১৩৫/৩। পরের চার ওভারে তারা করতে পারে মাত্র ২১ রান।
নিজের শেষ দুই ওভারে হাসান মাত্র পাঁচ রান দিয়ে তুলে নেন দুটি উইকেট।
বোলারদের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশও পেয়ে যায় জয়ের ভিত। দুটি উইকেট
নেন হাসান। বাকিরা পান একটি করে উইকেট। সিরিজের পরের দুটি ম্যাচ মিরপুর
শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১২ ও ১৪ মার্চ।
স্কোর কার্ড
ইংল্যান্ড
রান বল ৪ ৬
সল্ট ক লিটন ব নাসুম ৩৮ ৩৫ ৪ ১
বাটলার ক নাজমুল ব হাসান ৬৭ ৪২ ৪ ৪
মালান ক নাজমুল ব সাকিব ৪ ৭ ০ ০
ডাকেট ব মোস্তাফিজ ২০ ১৩ ৩ ০
মঈন নটআউট ৮ ৭ ০ ০
কারেন ক নাজমুল ব হাসান ৬ ১১ ০ ০
ওকস ব তাসকিন ১ ২ ০ ০
জর্দান নটআউট ৫ ৩ ১ ০
অতিরিক্ত ৭
মোট (৬ উইকেটে, ২০ ওভারে) ১৫৬
উইকেট পতন : ১/৮০, ২/৮৮, ৩/১৩৫, ৪/১৩৫, ৫/১৪৬, ৬/১৪৭।
বোলিং : নাসুম আহমেদ ৪-০-৩১-১, তাসকিন আহমেদ ৪-০-৩৫-১, মোস্তাফিজুর রহমান ৪-০-৩৪-১, সাকিব আল হাসান ৪-০-২৬-১, হাসান মাহমুদ ৪-০-২৬-২।
বাংলাদেশ
রান বল ৪ ৬
লিটন ক ওকস ব আর্চার ১২ ১০ ২ ০
রনি ব আদিল ২১ ১৪ ৪ ০
নাজমুল ব উড ৫১ ৩০ ৮ ০
তৌহিদ ক কারেন ব মঈন ২৪ ১৭ ২ ১
সাকিব নটআউট ৩৪ ২৪ ৬ ০
আফিফ নটআউট ১৫ ১৩ ২ ০
অতিরিক্ত ১
মোট (৪ উইকেটে, ১৮ ওভারে) ১৫৮
উইকেট পতন : ১/৩৩, ২/৪৩, ৩/১০৮, ৪/১১২।
বোলিং : স্যাম কারেন ২-০-১৮-০, ক্রিস ওকস ২-০-২১-০, জফরা আর্চার ৩-০-২৭-১,
আদিল রশিদ ৩-০-২৫-১, মার্ক উড ২-০-২৪-১, মঈন আলী ৪-০-২৭-১, ক্রিস জর্দান
২-০-১৬-০।
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : নাজমুল হোসেন শান্ত।