২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৮:৪২:৫৭ অপরাহ্ন


প্রশাসনে নারী কর্মকর্তাদের অবস্থান সুদৃঢ়
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
প্রশাসনে নারী কর্মকর্তাদের অবস্থান সুদৃঢ় ফাইল ফটো


প্রশাসনের সর্বস্তরে নারী কর্মকর্তাদের অবস্থান অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সুদৃঢ়। সিনিয়র সচিব থেকে সহকারী কমিশনার পর্যন্ত প্রশাসনের প্রতিটি স্তরেই তাদের সুদক্ষ নেতৃত্ব রয়েছে। মেধা ও বাস্তব কর্মদক্ষতায় তারা আর পিছিয়ে নেই। পুরুষ কর্মকর্তাদের মতো ইতোমধ্যেই নানা ধরনের চ্যালেঞ্জে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আগামী দিনে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের আরও উজ্জ্বল উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন নবীন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। 
বর্তমানে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ১০ জন, যা কর্মরত মোট সচিবের প্রায় ১৩ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্বপালন করছেন ফাতিমা ইয়াসমিন। সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে দায়িত্বপালন করছেন মোসাম্মৎ সানিমা বেগম। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ে জাকিয়া সুলতানা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে শরীফা খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ড. নাহিদ রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ড. শাহনাজ আরেফীন এনডিসি, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নাসরীন আফরোজ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন ওয়াহিদা আক্তর।

আর অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার নারী কর্মকর্তা ৫৫ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সংস্থার চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নয়জন নারী কর্মকর্তা দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্বপালন করছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন ১৬৪ জন নারী। যুগ্ম সচিব পদে ১৬৪ জন নারী কর্মকর্তা সরকারি দায়িত্বপালন করছেন। উপসচিব পদে দায়িত্বপালন করছেন ৩৭০ নারী। পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে ১৬৪ জন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে ১৩৩ জন নারী কর্মকর্তা কাজ করছেন। সহকারী সচিব/কমিশনার পদে কর্মরত ৪৩৩ নারী মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালন করছেন। অনেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বও পালন করছেন।
এছাড়া সহকারী সচিব/সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা ৪৩৩ জন। নিকট ভবিষ্যতে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব দেবেন-এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। 

তবে নারীর পথ চলার প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা। আর এটাকে আরও প্রবল করছে দৃষ্টিভঙ্গি। পরিবার থেকে কর্মক্ষেত্র সর্বত্র সীমাহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় তাদের। আপনজন সহকর্মী এবং চেনাজানা মানুষ তাদের অবজ্ঞা অবহেলা করে। অনেক রাজনৈতিক নেতা নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পোস্টিং না দিতে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে আবেদন করেন। সব সীমাবদ্ধতা, চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে চলছে প্রশাসনে নারীর অগ্রযাত্রা। আগামী দিনে এ পথচলা আরও মজবুত হবে এমনটাই বললেন বিসিএস ইউমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সায়লা ফারজানা। সোমবার তিনি নিজ কার্যালয়ে যুগান্তরকে বলেন, অতীতের চেয়ে প্রশাসনে এখন নারীর উপস্থিতি, নেতৃত্ব এবং অংশগ্রহণ বহুগুণে বেড়েছে। আগামী দিনে সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। পলিসি পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, মেয়েরা এখন লেখাপড়ায় এগিয়ে। তারা পুরুষদের মতো যে কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। নারীর অবস্থান তার নিজের অর্জন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক সমস্যার মধ্যে দায়িত্বপালন করতে হয়। তারপরও তারা দমে যাচ্ছেন না। তাদের সংগঠন নারী কর্মকর্তাদের সমস্যা নিয়ে কাজ করেন জানিয়ে সায়লা ফারজানা বলেন, অনেক সময় নারীদের অপেক্ষাকৃত খারাপ স্থানে পদায়ন করা হয়। তখন তারা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নারীর জন্য সুবিধাজনক স্থানে পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেন।

তিনি আরও জানান এখনও নারীরা কর্মক্ষেত্রে ‘বুলিংয়ে’ শিকার হন। বিষয়গুলো নিয়ে তারা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্তের ব্যবস্থা করেন। দোষী হলে যে বা যারা বুলিং করেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা করেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কিছু দিন আগে তথ্য ক্যাডারের একজন নারী কর্মকর্তাকে তার সহকর্মী পুরুষ কর্মকর্তা বুলিং করেন। বিষয়টি তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের বহু ঘটনা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তার প্রত্যাশা নারীর অগ্রযাত্রা বন্ধ করা যাবেই না। সব বাধা মাড়িয়ে নারী তার অবস্থা করে নেবেই। পলিসি পর্যায়ে নারীর উজ্জ্বল উপস্থিতি নিকট ভবিষ্যতে চোখে পড়ার মতো হবে।