খেলাপি ঋণ কমাতে প্রচলিত নীতিমালায় আরও ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটি কেবল রুগ্ণ শিল্পের উদ্যোক্তারা নিতে পারবেন। রুগ্ণ শিল্পের যেসব উদ্যোক্তার ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আছে, সমন্বয় করার ক্ষেত্রে তারা এখন আরও ছাড় পাবেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদ মওকুফ করার পর যে ঋণ স্থিতি থাকবে তার বিপরীতে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড হার এবং এর চেয়ে কম সুদ আরোপ করার বিধান রয়েছে। নতুন ছাড়ের ফলে ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় কস্ট অব ফান্ডের চেয়ে কম হারে সুদ আরোপ করতে পারবে। এর আওতায় ঋণ সমন্বয় করতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের ৩০ জুনের মধ্যে ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
এ বিষয়ে সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
সূত্র জানায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি রুগ্ণ ও নন টেক্সটাইল খাতের দুর্বল শিল্পের একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ ৫০ লাখ টাকার বেশি, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে তারা রুগ্ণ হয়েছে-এমন শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণ সমন্বয় করার জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে নীতিমালা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের সুদ মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপর যে ঋণ স্থিতি থাকবে, এর বিপরীতে ব্যাংক তহবিল ব্যবস্থাপনার হার বা কস্ট অব ফান্ড হারে সুদ আরোপের বিধান রয়েছে। কিন্ত গড়ে ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এই হারে সুদ আরোপ করায় অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে তা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে কস্ট অব ফান্ডের চেয়ে কম হারে সুদ আরোপের বিধান করা হয়েছে। ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় কস্ট অব ফান্ডের চেয়ে কম হারে সুদ আরোপ করতে পারবে। এর আগে রুগ্ণ শিল্পের উদ্যোক্তাদের সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এরপর বকেয়া যে ঋণ থাকবে, এর বিপরীতেও এখন সুদছাড়ের সুবিধা পাবে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, এ ছাড়ের আওতায় ঋণ সমন্বয় করতে হলে উদ্যোক্তাদের ৩০ জুনের মধ্যে ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এ সময়ের পর কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত রয়েছে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানোর। খেলাপি ঋণ কমাতেও এ নীতি সহায়ক হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, রুগ্ণ শিল্পের উদ্যোক্তাদের খেলাপি ঋণ আদায় বা নিয়মিত করা গেলে তারা যেমন ব্যবসা করতে পারবে, তেমনই খেলাপি ঋণের হারও কমে যাবে। এ কারণেই নীতিমালায় ছাড় দেওয়া হয়েছে।
খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বড় ঋণখেলাপিদের ঋণ নবায়ন করা অন্যতম। এর পাশাপাশি ছোট উদ্যোক্তাদের খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি খাতের খেলাপি ঋণ কমাতেও নীতিমালায় ছাড় দেওয়া হয়েছে।
আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসাবে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত আরোপ করেছে। বর্তমানে ছয়টি সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। বেসরকারি খাতের ৫টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের অনেক ওপরে রয়েছে। জানা যায়, নীতিতে ছাড় দেওয়ার ফলে গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।