বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সম্প্রতি বেড়েছে বোতলজাত পানির দামও। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা সাশ্রয়ের জন্য রাজধানীবাসী ঝুঁকতে শুরু করেছে ওয়াসার বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের এটিএম বুথের দিকে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা বিশুদ্ধ পানির বুথগুলো থেকে প্রতিদিন ১৩ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করছে। কয়েক দিন আগেও দৈনিক চাহিদা ছিল ১২ লাখ লিটার।
নগরবাসীকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ২৯৩টি এটিএম বুথ স্থাপন করেছে। এসব বুথ থেকে মাত্র ৪০ পয়সা লিটারে পানি সংগ্রহ করা যায়।
ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো একটি আরএফআইডি কার্ড বুথের মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসে বিশুদ্ধ খাবার পানি। সেই পানি নিজস্ব পাত্রে সংগ্রহ করতে হয়। টাকা শেষ হলে বুথ থেকেই ফের লোড করা যায়। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা বাড়লেও সমস্যা নেই। কারণ চাহিদা বাড়লে উৎপাদনও বাড়ানো হবে।
ঢাকা ওয়াসা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ড্রিংকওয়েল যৌথভাবে পাম্পগুলোর সংলগ্ন এলাকায় ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করে এই সেবা দিচ্ছে। এর জন্য
গ্রাহকদের শুরুতে বুথ থেকে ৫০ টাকা দিয়ে কার্ড করতে হয়। এই কার্ডে ১০ টাকা থেকে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যায়। বুথ থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পানি সংগ্রহ করা যায়।
জানা গেছে, রাজধানীতে বর্তমানে ওয়াসার ৩১৯টি এটিএম বুথ রয়েছে। এর মধ্যে বাসাবো, ফকিরাপুল, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, কমলাপুর, গাবতলী, মিরপুর, উত্তরা, দয়াগঞ্জ, বাড্ডা, ভাটারা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চালু রয়েছে ২৯৩টি বুথ। শুরুতে ডেনমার্কের একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ফকিরাপুলে ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করে ঢাকা ওয়াসা। পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ড্রিকংওয়েল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে এসব বুথ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বুথগুলোয় গ্রাহকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতে ৩০০ বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও পরে ৫০০ বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় ঢাকা ওয়াসা ও ড্রিংকওয়েল। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সচল থাকা ২৯৩টি বুথ থেকে তিন লাখ ৯ হাজার গ্রাহক বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করেছেন। কিছুদিন আগেও গ্রাহকসংখ্যা ছিল দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯০৯।
কার্ড ব্যবস্থাপনার প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওয়াসার বিশুদ্ধ পানির চাহিদা প্রতিদিন বাড়ছে। আগের তুলনায় গ্রাহক যেমন বেড়েছে, আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। তবে যে পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তাতে চাহিদা বাড়লেও সমস্যা হবে না।’
সূত্র জানায়, উৎপাদন খরচ বেশি হলেও এখনো আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে ওয়াসার বিশুদ্ধ পানি। তবে সম্প্রতি প্রতি লিটার ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮০-৯০ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবটি ওয়াসা বোর্ডের অনুমোদন পায়নি। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এটি অনুমোদন পেলে বর্ধিত দামে ওয়াসার বুথের বিশুদ্ধ পানি বিক্রি হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ওয়াসার বোতলজাত পানি ‘শান্তি’র দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসার বোতলজাত পানি উৎপাদন প্লান্টে (বিডাব্লিউপিপি) প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা উৎপাদন এবং বোতলজাত করা হয়। প্লান্টটিতে প্রতি ঘণ্টায় ৯ হাজার ১০০ লিটার পানি বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি বোতলজাত করার সক্ষমতা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন ২৫০ মিলির ২২ হাজার বোতল, ৫০০ মিলির ২৫ হাজার বোতল, এক লিটারের ১২ হাজার বোতল, দেড় লিটারের ১২ হাজার বোতল, দুই লিটারের ১০ হাজার বোতল, পাঁচ লিটারের ছয় হাজার বোতল, ২০ লিটারের তিন হাজার ৮০০ জার পানি বোতলজাত করার সক্ষমতা রয়েছে। বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ২৫০ মিলির ২০ হাজার বোতল, ৫০০ মিলির ১৫ হাজার বোতল, এক লিটারের ছয় হাজার বোতল, দেড় লিটারের দুই হাজার বোতল, দুই লিটারের দুই হাজার বোতল, পাঁচ লিটারের তিন হাজার বোতল, ২০ লিটারের এক হাজার ৫০০ জার। ওয়াসার পানির মূল্য অন্য কম্পানিগুলোর পানির তুলনায় কম।