ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তর মিরপুরে স্থানান্তর, সদস্যদের বাসস্থান ও আজীবন রেশন সুবিধাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অধিদপ্তরে নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) নিযুক্ত হওয়ার পর এই উদ্যোগ নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহাপরিচালক হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় মিরপুরে নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর মিরপুরের ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্স নেয়া হবে পূর্বাচলে। এ ছাড়া রাজধানীর ফুলবাড়ীয়ায় কাজী আলাউদ্দিন রোডের বর্তমান স্থাপনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সব স্থাপনাসহ স্টেশনগুলো মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নামে নামজারি করার কাজ শুরু হয়েছে।
সদর দপ্তর ও হাসপাতাল: এরই মধ্যে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় করার জন্য সরকারের সঙ্গে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। আরবান সেফটি বিল্ডিং বা নগরায়ণ ভবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় জাইকা ১২ তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক এই ভবন তৈরি করবে। ভবনটি তৈরির প্রস্তুতি চলছে। ভবনটি ৮ রিখটার স্কেল ভূমিকম্প প্রতিরোধক হবে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের জন্য মিরপুরে একটি হাসপাতাল ভবন তৈরি ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। শিগগিরই এটি চালু হবে বলে আশা করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি বিভাগীয় কার্যালয়ে এমআই (মেডিকেল ইনভেস্টিগেশন) রুম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার মিরপুর ও খুলনায় এমআই রুম চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগেও চালু হবে।
বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স টেনিং কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক এই কর্নার উদ্বোধন করেন।
পেনশন সুবিধা: চাকরির শেষ তিন মাস পেনশন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সুবিধার্থে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সমস্যা এড়ানোর জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের তিন মাস আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজ জেলা বা জেলার আশপাশে পোস্টিং দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাসস্থান সমস্যা নিরসন: অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বাসস্থানের সমস্যা নিরসনে মিরপুর ও পূর্বাচলে ২টি ১২ তলা ভবন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সদস্যদের বাসস্থান সমস্যা সমাধানে আরও ৬টি ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ১০ তলা ভবনগুলোর তিনটি সিদ্দিকবাজার অফিসার্স কোয়ার্টার, মিরপুর ও পোস্তগোলায় হবে। আর তিনটি ভবন হবে তেজগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার, সদরঘাট ও পোস্তগোলায়। বর্তমানে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রণয়নের কাজ চলছে।
প্রশিক্ষণ একডেমি স্থাপন: ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য উন্নত বিশ্বের মতো আধুনিক সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ১০০ দশমিক ৯২ একর জায়গা অধিগ্রহণ ও মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে।
আজীবন রেশন: ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের আজীবন রেশন সুবিধা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা: ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতা বিদ্যমান রয়েছে। তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ বাদ যাওয়ায় এ বিষয়ে সংশোধিত প্রজ্ঞাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে গত ২৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
ফায়ার স্টেশনের শ্রেণি উন্নয়ন: এসব উদ্যোগের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের শ্রেণি উন্নীতকরণেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ফায়ার স্টেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২২টি সদর ফায়ার স্টেশনকে ‘বি’ শ্রেণি থেকে ‘এ’ শ্রেণিতে উন্নীতকরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মডার্ন ফায়ার স্টেশনের জনবল ৫৬ জন এবং স্থল ও নদীতে একসঙ্গে কাজ করা ফায়ার স্টেশনের জনবল হবে ৪১ জন। বি শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোর জনবল যথাক্রমে ৩৯ ও ৩১ জনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার স্টেশনের ভবনগুলো ভিত্তিসহ ৫ তলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অধিদপ্তর।
এসব বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘অধিদপ্তরে যোগদানের পর ফায়ার সার্ভিসে বেশকিছু উন্নয়নমূলক পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়টি মিরপুরে স্থানান্তরের ও ট্রেনিং সেন্টারটি পূর্বাচলের মাল্টিপারপাস ট্রেনিং কমপ্লেক্সে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান সমস্যা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চিকিৎসা সেবার জন্য মিরপুরে একটি জেনারেল হাসপাতালও তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।’