০৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০২:২৯:০৫ পূর্বাহ্ন


নিউ জেএমবির আমির তুরস্কে গ্রেপ্তার
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৩-২০২৩
নিউ জেএমবির আমির তুরস্কে গ্রেপ্তার ফাইল ফটো


নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘নিউ জেএমবি’র আমির মোহাম্মদ কামরুল হাসান ওরফে মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙালী তুরস্কে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিছুদিন আগে তাকে গ্রেপ্তার করে।

এখন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এই জঙ্গি নেতাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। এই জঙ্গি নেতা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জঙ্গি হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’। তুরস্কে বসে অনলাইনে এসব হামলার দিকনির্দেশনা থেকে শুরু করে অর্থায়ন- পুরো কাজ মাহাদী হাসান জন করেছিলেন। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, মাহাদী হাসানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ ইস্যু করতে এবং তাকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে চিঠি দিয়েছি। এখন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করছে।

জানা গেছে, গুলশানের হোলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের মুখে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি অনেকটাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তাদের অনেকেই নিহত কিংবা গ্রেপ্তার হন। এতে নব্য জেএমবি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ঠিক তিন বছরের মাথায় এসে ২০১৯ সালে এই গোষ্ঠী নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ?হামলা হয়। এ ছাড়া একই বছরে মালিবাগ ও সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে দূর নিয়ন্ত্রিত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অন্যদিকে রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় পল্টন ও খামারবাড়ি এলাকার দুটি পুলিশ বক্সের পাশ থেকে দুটি বোমা উদ্ধার করা হয়।

এসব বিস্ফোরণে পুলিশের পাঁচ সদস্য, একজন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য, একজন রিকশাচালক ও এক নারী আহত হন। সব ঘটনা ঘটে সন্ধ্যার পরে। সব হামলায় মাহাদী হাসানের সরাসরি সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। এ ছাড়া ২০২০ সালে কুমিল্লায় এবং ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ বক্সে জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, মাহাদী হাসান এক সময় বগুড়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। এরপর জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিয়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন। পরবর্তীকালে নিউ জেএমবির আমির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন। মাহাদী হাসান জন তার সাংগঠনিক নাম। অনলাইনে পরিচিত কোডন্যাম কুনিয়া হিসেবে। আর পারিবারিক নাম মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায়। তার বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানায় ৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মুলতবি রয়েছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি হামলার অন্যতম আসামিও তিনি। নিউ জেএমবিতে তিনি আবু আব্বাস আল বাঙালী নামেও পরিচিত। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ জেএমবির আমির নির্বাচিত হন এই জঙ্গি নেতা।

জানা গেছে, জঙ্গিবাদে জড়িত থাকা অবস্থায় মাহাদী হাসান শ্রমিক ভিসায় ২০১৬ সালে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন তুরস্কে। সেখান থেকে আইএস নেতা আবু আইয়ুব আস সামির সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। পরবর্তীকালে সিরিয়ার নাগরিক উম্মে আবদুল্লাহকে বিয়ে করেন। এই উম্মে আবদুল্লাহর স্বামী ছিলেন আইএস নেতা ইয়াজউদ্দিন। সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযানে ইয়াজউদ্দিন মারা যাওয়ার পর উম্মে আবদুল্লাহকে বিয়ে করেন মাহাদী হাসান জন। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা ও ইস্তানবুল শহরে বসেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন এই জঙ্গি নেতা। ঢাকা থেকে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সদস্যরা তার গতিবিধি প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরে রাখছিলেন। পরবর্তীকালে সিটিটিসি বিষয়টি তুরস্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানায়। এরপর দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাহাদী হাসান জনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসিকে অবহিত করে। তাকে ধরতে বেশ কয়েকটি দেশের প্রভাবশালী গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে- ইমো, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বাংলাদেশে তরুণ সমাজকে জঙ্গিবাদের দীক্ষা দিয়ে নিউ জেএমবিতে ভেড়াতেন মাহাদী হাসান। এই জঙ্গি নেতার কয়েকজন সহযোগী সৌদি আরব, তুরস্ক এবং সিঙ্গাপুরে থেকে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম চালান। ঢাকায় যে কোনো হামলার আগে হিযরত, বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে জঙ্গি হামলা পরিচালনায় অর্থায়ন করে আসছিলেন মাহাদী হাসান জন। সম্প্রতি মাহাদী হাসান বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার ছক কষছিলেন। তার আগেই গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে তুরস্কের কারাগারে রয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে মাহাদী হাসান জন ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর জঙ্গি হামলায় পেছনের কুশীলব হিসেবে কাজ করেছেন। সিটিটিসির জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পরই মাহাদী হাসান জন দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান।