এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ ৯৫ শতাংশ ♦ বনানী-মগবাজার ৫১ শতাংশ ♦ মগবাজার-যাত্রাবাড়ী চলছে পাইলিং
রাজধানীর যানজট নিরসনে জাদুর কাঠি হিসেবে কাজ করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়ালসড়ক)। দেশের প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে চলছে বিরতিহীন কর্মযজ্ঞ। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের (কাওলা-বনানী) নির্মাণকাজের ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত প্রথম অংশের সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। একই সঙ্গে ব্যারিয়ার ও ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হলে পুরোপুরি প্রস্তুত হবে এ অংশের কাজ। খুব দ্রুতই এক্সপ্রেসওয়ের এ অংশ উদ্বোধন করে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, প্রকল্পটি নির্মাণের সুবিধার্থে তিন ফেজে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশ এয়ারপোর্ট-বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার পর্যন্ত। সবশেষ মগবাজার-চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ খুব দ্রুতগতিতে চলছে। কাজের গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। এই এক্সপ্রেসওয়েটির কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যেতে ১৫-২০ মিনিট লাগবে। একই সঙ্গে ঢাকার যানজট অনেকটা কমে যাবে।’ তিনি বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ পাশ থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটারের প্রথম অংশের কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে মূল কাজ শেষ হয়েছে। অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। শেষ মুহূর্তের ফিনিশিংয়ের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। এ অংশের কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। মগবাজার থেকে কুতুবখালী অংশে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ১৫০টির বেশি পাইলিং করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি কলামের কাজ শেষ হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজধানীর আশপাশে যানবাহন চলাচল সহজ করার লক্ষ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় চার লেনের ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে। এই এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এটির র্যাম্প রয়েছে ৩১টি। রাজধানীকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করতে সরকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বনানী অংশে সড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কের কাজ বাকি রয়েছে। বনানী অংশে ব্যারিয়ারের কাজ চলছে। ল্যাম্পপোস্ট এখনো বসানো হয়নি। কুড়িল অংশে র্যাম্পের কাজ শেষ হয়েছে। টোল প্লাজা, নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ল্যাম্পপোস্টও বসানো হয়েছে। বিমানবন্দর অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে দুটি টোল প্লাজা দৃশ্যমান। একই সঙ্গে টোল প্লাজা লাগোয়া প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজও দৃশ্যমান হয়েছে। বিমানবন্দরের অংশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ওঠার জায়গাটির কার্পেটিং ও দুই পাশের ব্যারিয়ারের কাজ বাকি রয়েছে। যদিও মাটি ও ইটের কণা ফেলে আপাতত সচল রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত মূল সড়কের কাজ শেষ। এখন এক্সপ্রেসওয়ের কার্পেটিং করার জন্য ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। একই সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ লাগানোর কাজ বাকি রয়েছে। বসানো হয়েছে দিকনিদের্শনাসংবলিত সাইনবোর্ড। বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সাইট ব্যারিয়ার ও মিডেলিং ব্যারিয়ারের কাজ প্রায় শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।
প্রকল্প এলাকায় কথা হয় নির্মাণশ্রমিক সাদ্দামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পুরোদমে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। আমাদের বর্তমানে দুই শিফটে কাজ করানো হচ্ছে। এক শিফট সকাল ৮টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করে। আর দ্বিতীয় শিফট ৭টায় শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে। ফিনিশিং, লাইটিং, কার্পেটিংসহ এক্সপ্রেসওয়ে প্রস্তুতে সব ধরনের কাজ চলছে। বনানী থেকে এয়ারপোর্ট অংশে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।
প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির বিদ্যমান অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়ার কারণে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সময় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পে সংশোধনী এনে সময় ও ব্যয় আরও বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত উড়ালসড়কে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।