বর্তমান সরকারের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ চিত্র। তবে আগে যেসব নাগরিক সুবিধা শহরে মিলত এখন অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে সেই সেবা গ্রামেই পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারের ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ স্লেøাগানকে বাস্তবে রূপ দিতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) আড়াইশ প্রকল্পে বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদের সার্বিক চিত্র। এর মধ্যে ১৪৯টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে এলজিইডি। বাকি ১০১টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সুষম উন্নয়নে পালে হাওয়া লেগেছে। এ ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে গ্রামীণ অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তাতে দেশের কোনো অঞ্চলই তার দৃষ্টি এড়ায়নি। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, সেতু, হাটবাজার, পুকুর খনন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ, উপজেলা কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে। যদিও এক সময়ে অনুন্নত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা প্রান্তিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় ছিল। তবে সুখবর হলো, এসব সংকট নিরসনে কাজ শুরু করেছে সরকার। বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১০১টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
এলজিইডি সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় রাস্তাঘাট, সেতু, হা-বাজার, পুকুর খনন, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলজিইডিতে বর্তমানে এডিবিভুক্ত সংখ্যা ১০১টি। এর মধ্যে ৭৯টি প্রকল্প জিওবির অর্থায়নে ও ২২টি প্রকল্প বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
এসব প্রকল্পের মোট ক্রমপঞ্জির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। চলমান এ প্রকল্পগুলো বিভিন্ন মেয়াদে শেষ হবে বলে প্রকল্পসূত্রে জানা গেছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই ১৭টি প্রকল্প হলো, উপজেলা কমপ্লেক্স স¤প্রসারণ প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত), পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা) (দ্বিতীয় সংশোধিত), পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত), বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা) শীর্ষক প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ উপজেলা হেডকোয়ার্টার থেকে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া ভায়া নাজিরপুর রাস্তা ও সেতু নির্মাণ কাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্প, নেত্রকোনা জেলাধীন মোহনগঞ্জ ও আটপাড়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), নর্দান বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত), গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প : ভোলা জেলা শীর্ষক প্রকল্প, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সুনামগঞ্জ জেলা (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), সেক্টর গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি ১১ উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত), মিউনিসিপ্যাল গভারন্যান্স এন্ড সার্ভিসেস প্রজেক্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত), ‘সিটি গভারনেন্স প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত), নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত), চরফ্যাশন পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, সুনামগঞ্জ পৌরসভার সেবার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প, কেশবপুর-সাগরদাড়ি মধু সড়ক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প শেষ হলেও হাতেগোনা কয়েকটি প্রকল্প চলমান।
প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি ভোরের কাগজকে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেখানে আমরা ফিজিক্যাল (ভৌত অবকাঠামো) কমিউনিকেশন বা ডিজিটাল কমিউনিকেশন দুটিই এখন বাংলাদেশে সমৃদ্ধ। সারাদেশের মানুষের সঙ্গে এখন ইন্টারনেট সংযুক্তির মাধ্যমে শুধু যোগাযোগই নয়, এমন কি আয় রোজগারের ব্যবস্থাও সৃষ্টি হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করতে সক্ষম হচ্ছে। সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। এক কথায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, দেশের মানুষ যাতে তার প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্যই আমাদের এই উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ বলে জানান তিনি।