২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৪:৫০:০৪ অপরাহ্ন


এপ্রিলে উৎপাদনে আসছে শিকলবাহা, মিলবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০২-২০২৩
এপ্রিলে উৎপাদনে আসছে শিকলবাহা, মিলবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এপ্রিলে উৎপাদনে আসছে শিকলবাহা, মিলবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ


বিদ্যুৎ সংকট দূর করতে প্রায় দেড় বছর পর চালু করা হচ্ছে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। আগামী এপ্রিল মাসে উৎপাদনে আসছে সরকারি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এতে চাহিদামতো সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গ্যাস টারবাইন, পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটে গত দেড় বছরেরও বেশি সময় এই পাওয়ার প্ল্যান্টটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে শুষ্ক মৌসুম সামনে রেখে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকট ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গত বছর বিদ্যুৎ অপচয়ের ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক করে সরকার।

এমনকি ওই সময় লোডশেডিং করে বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে আনা হয়। এরফলে শিল্পের উৎপাদন কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ভোগ্যপণ্যসহ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এবার আগেভাগে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়লাভিত্তিক রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট পুনরায় উৎপাদনে ফিরে এসেছে। সরকারি এই উদ্যোগের ফলে দেশে বিদ্যুৎ সংকট অনেকাংশে সমাধান হবে বলে আশা করা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য ৯১ কোটি ৮৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৮৯ টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া রমজান মাস সামনে রেখে বৈঠকে টিসিবির জন্য এক কোটি ৬০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক উন্নয়নে ১৬৯ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ঢাকার জেঅ্যান্ডসি ইমপেক্সের কাছ থেকে শিকলবাহা পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস টারবাইন অংশের সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ সংগ্রহ, স্থাপন এবং বিশেষজ্ঞ সেবা নেবে। এজন্য ব্যয় হবে ৯১ কোটি ৮৫ হাজার ৪৮৯ টাকা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক কামরুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, গ্যাস টারবাইনসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তিনি বলেন, নতুন করে যেসব সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে আগামী এপ্রিলে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অবস্থান। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সাত কেন্দ্রের তিনটি গ্যাসভিত্তিক, দুটি পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, একটি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও একটি কম্বাইন্ড সাইকেল। যার উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো চলছিল জোড়াতালি দিয়ে। এর মধ্যে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিকলবাহার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে গ্যাসভিত্তিক এই তিন কেন্দ্র। শিকলবাহায় রয়েছে ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এছাড়া ১৫০ ও ৬০ মেগাওয়াট দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নে রয়েছে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-২ এবং ৩ নম্বর ইউনিটে রয়েছে ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি সচল রাখতে প্রয়োজন ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রাখতে প্রয়োজন ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও শিকলবাহার ৬০ মেগাওয়াটের অপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রয়োজন ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গত দেড় বছরের বেশি সময় আগে শিকলবাহার দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)।
এক কোটি ৬০ লাখ লিটার সয়াবিন কেনা হচ্ছে ॥ রমজান মাস সামনে রেখে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এক কোটি ৬০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে। কয়েক মাস ধরেই ভোজ্যতেল কিনছে টিসিবি। এতে টিসিবির মজুতে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোজ্যতেল রয়েছে। সংস্থাটির এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে এই তেল ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করবে সরকার। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি রমজানের সময় টিসিবির মাধ্যমে কার্ডধারীরা চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

এসব পণ্যের মজুত ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির জন্য এক কোটি ৬০ লাখ লিটার তেল কিনতে খরচ হবে ২৭৬ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে গড়ে প্রায় ১৭২ টাকা যা আগের চেয়ে কম। এর আগে প্রতিলিটার সয়াবিন প্রায় ১৭৮ টাকায় কেনা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুফল পাচ্ছে টিসিবিও। প্রতিলিটারে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬ টাকার মতো। 
ক্রয়  কমিটির সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ১৯০ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, টিসিবির জন্য এ তেল কেনা হবে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৭২ টাকা ৯৫ পয়সা। আগে এর ক্রয় মূল্য ছিল ১৭৭ টাকা।

স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে এই সয়াবিন তেল কেনা হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএন ট্রেডিং ঢাকার কাছ থেকে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৭২ টাকা ৮০ পয়সা। আগে এর ক্রয়মূল্য ছিল ১৭৮ টাকা ৪৫ পয়সা। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ তেল কেনা হবে। 
২২৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় ৬০ হাজার টন সার কেনা হবে ॥ ২২৫ কোটি ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭০৬ টাকা দিয়ে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রেস কোম্পানি ও বাংলাদেশের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাছ থেকে এ সার কিনতে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক উন্নয়নে ১৬৯ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে দিয়ে এ উন্নয়ন কাজ করার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল আদায়ের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএসএল) নিয়োগ অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।