২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৪:৩১:২৭ অপরাহ্ন


প্রধানমন্ত্রীর ‘বাসন্তী উপহারে’ খুশি মিরপুরবাসী
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৩
প্রধানমন্ত্রীর ‘বাসন্তী উপহারে’ খুশি মিরপুরবাসী ফাইল ফটো


যান চলাচলের জন্য রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) খুলে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর কালশী ফ্লাইওভার। ত্রিমুখী এই ফ্লাইওভার পেয়ে সন্তুষ্ট মিরপুরবাসী। বিশেষ করে মিরপুর ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মিরপুর ১১-১২, নামাপাড়া ও মাটিকাটা এলাকার বাসিন্দারা অনেক খুশি।

পল্লবী, মিরপুর ডিওএইচএস ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ইসিবি চত্বর থেকে তিনটি সড়ক এসে মিলেছে কালশীতে। মিরপুরের উত্তর প্রান্তের প্রবেশদ্বার বলা যায় এই মোড়কে। রাজধানীর উত্তরা, খিলক্ষেত, কুড়িল, বারিধারা, বনানী এলাকা থেকে যারা মিরপুর যান বা মিরপুর থেকে যারা এসব এলাকায় যান তাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কালশী তিন রাস্তার মোড়।

এখানেই নির্মাণ করা হয়েছে কালশী ফ্লাইওভার। নির্ধারিত সময়ের ৪ মাস আগেই কাজ শেষ হওয়া এই ফ্লাইওভারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মিরপুরবাসীর জন্য ‘বাসন্তী উপহার’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। 

ফ্লাইওভার নির্মাণের আগে ও নির্মাণের সময় বিভিন্ন দিক থেকে আসা গাড়ির ভীষণ চাপ থাকত কালশী মোড়ে। এই মোড় পাড়ি দিতে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগত। সেই ভোগান্তি এখন শেষ হয়েছে। ২ হাজার ৩৩৫ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় ইসিবি চত্বর থেকে কালশী পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০০ মিটার রাস্তাও প্রশস্ত করা হয়েছে।

রোববার এই ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই ফ্লাইওভারটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

রোববার বিকেলে মিরপুর ডিওএইচএস, কালশী ও ইসিবি চত্বরে স্থানীয়দের সঙ্গে এবং এই পথ ব্যবহারকারী অনেকের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। বেশিরভাগ মানুষই বলছেন, প্রশস্ত রাস্তা ও ফ্লাইওভার তাদের জন্য একরকম আশীর্বাদ।

কালশী মোড়ে কথা হয় চায়ের দোকানি বাবুল শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই পথে আগে ২টার বেশি গাড়ি পাশাপাশি যেতে পারত না। কালশী মোড়ও ছিল ছোট। মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকত। এখন মোড় বড় হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় দেখলাম কোনো জ্যাম নেই। বাসগুলো যাচ্ছে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আর প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল যাচ্ছে ওপর দিয়ে। এই ব্রিজে সবার উপকার হয়েছে।’

গণমাধ্যমকর্মী আজাদ হোসেনের বাসা মিরপুর ডিওএইচএসে। তিনি নিয়মিত এই পথ ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘আগে অফিসে যেতে বেশি সময় হাতে নিয়ে বের হতে হতো। প্রথমে সাগুফতা মোড়ের জ্যাম, এরপর কালশী আর তারপর ইসিবি চত্বর- তিন জায়গাতেই যানজট হতো। আজ এই তিন মোড়ই জ্যাম ছাড়া পার হয়েছি।’

মিরপুর-১২ এলাকার বাসিন্দা সায়মুম আহমেদ বলেন, ‘রাস্তা প্রশস্ত হওয়ায় দারুণ সুবিধা হয়েছে। ইসিবি চত্বর থেকে কালশী পর্যন্ত রাস্তার মাঝে কোনো ইউ-টার্ন নেই। কালশী থেকে ডিওএইচএস পর্যস্ত দুটি ইউ-টার্ন আছে। তবে সেগুলো চলন্ত গাড়ির জন্য কোনো বাধা হবে না। এখন এই পথে অনায়াসে ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালানো যায়।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৬) মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, ‘ঢাকা-১৬ আসনে যত সমস্যা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি সমস্যার সমাধান করেছেন। কালশী মোড়ে যে যানজট ছিল ফ্লাইওভার হওয়ায় সেটি আর থাকবে না। এই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে ঢাকা-১৬ আসনের বাসিন্দারা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে ফ্লাইওভার হওয়ায় মিরপুরবাসীর পাশাপাশি মিরপুর ডিওএইচএসের বাসিন্দারাও সুফল পাবেন। আগে মিরপুর-১২ নম্বর যেতে জনগণের ১২টা বেজে যেত। এখন আর ১২টা বাজবে না, ১২ মিনিটও লাগবে না এই এলাকা ক্রস করতে।’

কালশী ফ্লাইওভার ও রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা। এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে ডিএনসিসি ও সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। সড়ক ও ফ্লাইওভার মিলিয়ে এখানে মোট ৮টি লেন করা হয়েছে। ৬টি লেনে যান্ত্রিক পরিবহন এবং ২টি লেনে অযান্ত্রিক যান সাইকেল চলবে।

ফ্লাইওভারটি দেখতে অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘Y’ এর মতো। মূল চার লেনের ফ্লাইওভারটি ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ও মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে গেছে। কালশী মোড় থেকে পল্লবীমুখী কালশী রোড পর্যন্ত দুই লেনের র‍্যাম্প নামানো হয়েছে।

প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- একটি পিসি গার্ডার সেতু সম্প্রসারণ, দুটি ফুট ওভারব্রিজ, একটি পাবলিক টয়লেট, দুটি পুলিশ বক্স, একটি ৭.৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন ও সসার ড্রেন, একটি এক হাজার ৭৫৫ মিটার আরসিসি পাইপ ড্রেন, রিটেইনিং ওয়াল, ৩ হাজার ৩৮৩ মিটার কমিউনিকেশন ডাক্ট, ৮ লাখ লিনিয়ার মিটার বালু কম্প্যাকশন পাইল, পৃথক সাইকেল লেন ও ৭টি বাস-বে (যাত্রী ওঠা-নামার জন্য নির্ধারিত স্থান)।

২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এ বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের ৪ মাস আগেই কাজ শেষ হয়েছে।