২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১২:৫১:১১ অপরাহ্ন


করলা চাষেই স্বাবলম্বী মহেশচন্দ্রপুর গ্রাম
সৌরভ সোহরাব, সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০১-২০২৩
করলা চাষেই স্বাবলম্বী মহেশচন্দ্রপুর গ্রাম করলা চাষেই স্বাবলম্বী মহেশচন্দ্রপুর গ্রাম


আজ থেকে ২০ বছর আগেও পাশের গ্রামের মানুষ যে গ্রামটিকে অবহেলার চোখে দেখতো।  গ্রামের  শিক্ষিত ছেলে মেয়েদেরও ভালো কোথায়ও বিয়ে দিতে পারত না।  অভাব অনটনের কারনে যে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই পেশায় ছিল দিনমজুর। মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত  সেই গ্রামটিই এখন ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হচ্ছে। পাকা বাড়ির পাশা পাশি গ্রামের অনেকেই ফ্লাট বাড়িও করেছেন। আর এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এনে দিয়েছে করলা ও বিভিন্ন সবজি চাষে। গ্রামটির নাম মহেশচন্দ্রপুর। নাটোরের সিংড়া উপজেলার এই গ্রামটি এখন করলার গ্রাম নামে পরিচিত। 

চলতি মৌসুমে প্রায় ১শত হেক্টর জমিতে করলার চাষ করেছেন এ গ্রামের কৃষক। করলার পাশাপাশি মহেশচন্দ্রপুর গ্রামে আলু, পটল ঢেঁড়শ সহ বিভিন্ন সবজির চাষও হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছেন মহেশচন্দ্রপুর গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ মাঠের মাটি সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানকার শতভাগ মানুষ সবজি চাষ করেন এর মধ্যে শুধু করলার চাষই করেন ৯০ ভাগ কৃষক।

মহেশচন্দ্রপুর গ্রামের এসব  করলার বেচা কেনায় গড়ে উঠেছে মৌসুমি করলার বাজার। কাক ডাকা ভোর থেকেই শুরু  হয় এ বাজারের বেচা কেনা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখান থেকে করলা কিনে নিয়ে যান।

সম্প্রতি সকাল ৮টায় সরেজমিনে মহেশচন্দ্রপুর করলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কেনা বেচা বেশ জমে উঠেছে। জমি থেকে করলা তুলে কেউবা মাথায় আবার কেউবা অটো ভ্যান নিয়ে এই বাজারে আসছেন। কৃষকদের কাছ থেকে দরদাম করে কিনছেন পাইকাররা। করলা ভেদে ১৫০০শত থেতে ২০০০ হাজার টাকা প্রতি মণ করলা বিক্রয় হচ্ছে এখানে। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ বাজারে বেচা কেনা হয়। নভেম্বর থেকে র্মাচ পর্যন্ত বছরে ৫ মাস চলে এ বাজার ।

মোঃ মুয়াজ্জেন মন্ডল নামের এক পাইকারী ব্যবসায়ী  নওগাঁ জেলার আবাদপুকুর থেকে এসেছেন এ বাজারে  করলা কিনতে। তিনি জানান,  ভোর ৬টায় এখানে পৌছেছি। আমি প্রতিদিন এখান থেকে করলা কিনে নিয়ে যাই। 

বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে আগত ব্যবসায়ী  রহিম শিকদার জানান, আগাম জাতের এই করলার চাহিদা বেশি থাকায় আমরা প্রতিবছর এখান থেকে করলা কিনে রাজধানী শহর ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে পাঠাই।

মহেশচন্দ্রপুর গ্রামের পূর্ব মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতে করলা চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ মাঠের দিগন্তজুড়ে শুধু করলা আর করলা। 

কৃষক আলা উদ্দিন জানান, আমার ২ বিঘা জমিতে করলার চাষ করে মোট খরচ হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। আমি ১৫ দিনে ৮০ হাজার টাকার করলা বিক্রয় করেছি আরও ১৫ দিন বিক্রয় করবো তাতে এই ২ বিঘা থেকে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করলা বিক্রি করার আশা আছে।

মহেশচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক ও করলা ব্যবসায়ী মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ৩৫-৪০ বছর আগে থেকেই এ গ্রামে করলা ও বিভিন্ন সবজি চাষ করলেও সে সময় কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারেন নাই। কারণ সে সময় করলার চাষ করা হতো মাঘ-ফাল্গুন মাসে আর বিক্রয় করা হতো বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। এখন  আধুনিকভাবে করলার চাষ আগাম করা হয়। আগাম জাতের এসব করলা ডিসেম্বর থেকেই বেচা কেনা শুরু হয় ফলে দাম ও ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হন কৃষক।

কৃষক মহিদুল ইসলাম জানান, এখানে বেশির ভাগ সাইট্যা জাতের করলার চাষ হয়। উন্নত জাতের করলার এ বীজ সাধারণত রংপুর থেকে আনতে হয়। বীজ কেনা, সার,কীটনাশক সহ প্রতি বিঘা জমিতে করলা চাষে মোট খরচ হয় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। দাম ও ফলন ভালো হলে সাধারনত প্রতি বিঘা জমিতে ৭০ হাজার থেকে ৮০ টাকার করলা বিক্রয় করা যায়। তাতে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, চলতি মৌসুমে  উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে করলার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে করলার চাষ হয়েছে শুধু মহেশচন্দ্রপুর গ্রামে। এ গ্রামের শতভাগ মানুষ সবজি চাষ করেন এর মধ্যে ৯০ ভাগ কৃষকই করেন করলার চাষ। করলা ও সবজি চাষে ওই গ্রামের অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন। অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামটি। মহেশচন্দ্রপুর গ্রামের  দেখাদেখি পাশের গ্রামের মানুষও ঝুঁকছে সবজি চাষে।  এসব চাষীদের আমরা সঠিক পরার্মশ দিচ্ছি । এছাড়া  বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষ কৃষক হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে।