আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের মধ্যে কয়েক মাস ধরেই চলছে গৃহ বিবাদ। দলে একক প্রভাব নিশ্চিতে সম্মেলনও ডেকেছিল রওশন পন্থীরা। অন্যদিকে প্রভাব ধরে রাখতে বিরোধী দলীয় নেতা পরিবর্তন ও বিদ্রোহীদের বহিষ্কারও করেন জিএম কাদের। যা আদালতেও গড়িয়েছে। এরই দুই পক্ষকে নিয়ে গণভবনে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দলটিকে শক্তিশালী করার জন্য পরামর্শও দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পুত্র রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার মত বৈঠক হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। প্রধানমন্ত্রী তাদের দলকে আরও শক্তিশালী হতে পরামর্শও দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জিএম কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের ডেকেছিলেন। ম্যাডাম রওশন এরশাদ ফিরেছেন, সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। আলোচনা ছিল সৌজন্য বিনিময়। স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। ত্রিশ-চল্লিশ মিনিটের মতো ছিলাম।’
কি বিষয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী, এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘উনি চান জাতীয় পার্টি স্ট্রং হোক।’
নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান জানান, ‘এগুলো আমরা নিজেদের ফোরামে আলাপ করি।’
প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতার শারীরিক খোঁজ-খবর নেন এবং কুশল বিনিময় করেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর যে কোনো দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলসমূহের দায়িত্বশীল ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে বৈঠকে জাপার নেতারা বলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এতে বলা হয়, যার সুফল বাংলাদেশের জনগণ ভোগ করছে এবং দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। জাপা তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখতে বদ্ধ পরিকর এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদ ও সংসদের বাইরে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাবে প্রধানমন্ত্রীকেই জানান দলটির শীর্ষ দুই নেতা।
গত বছরের ৫ নভেম্বর রওশন এরশাদকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে দেশে ফেরেন রওশন এরশাদ। তবে তিনি বাসায় না থেকে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ছিলেন। এরপর ৫ জুলাই ফের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। দীর্ঘ ৫ মাস থাইল্যান্ডে চিকিৎসা থেকে গত ২৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন রওশন এরশাদ।
জাপায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছিল। এরই মধ্যে গত ৩০ আগস্ট রওশনপন্থীরা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে দলের বেশির ভাগ সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষরে রওশনকে বিরোধী দলের পদ থেকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে এ পদে বসাতে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়। পরে মসিউর রহমান রাঙা ওই চিঠিকে অবৈধ উল্লেখ করে স্পিকারকে পাল্টা চিঠিও দেন।
রওশনকে বাদ দিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা করার চিঠি স্পিকারের দপ্তরে ঝুলে রয়েছে। অবশ্য থাইল্যান্ড থেকে ফেরার পরে ২৯ নভেম্বর সকালে এক সঙ্গে নাশতা করেন জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ।