লক্ষ্য ২০৩৫। আর তার মধ্যে নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার তিন গুণ বাড়িয়ে নিতে পারবে চিন। গত কাল আমেরিকান কংগ্রেসে পেশ করা একটি রিপোর্টে এমনই দাবি করেছে দেশের প্রতিরক্ষা দফতর। পেন্টাগনের শীর্ষ আধিকারিকদের দাবি, গত বছর থেকে চিন নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির দখলে আপাতত চারশোর বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার এ ভাবে বাড়াতে থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে অন্তত দেড় হাজার পরমাণু অস্ত্র থাকবে। যা বর্তমান সংখ্যার প্রায় তিন গুণ। ওই একই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে যে, ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে আমেরিকা যাতে নাক না গলায় তা নিয়ে হোয়াইট হাউসের আধিকারিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল বেজিং।
প্রতি বছরই আমেরিকান কংগ্রেসে চিনের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করে পেন্টাগন। সেখানেই বলা হয়েছে, ২০২০ সালেই নিজেদের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেয় বেজিং। সেই মতো গত বছর থেকে তাদের অস্ত্র কর্মসূচির ছবিটা পাল্টে যায়। পেন্টাগনের দাবি, বর্তমান দক্ষিণ চিন সাগরে পিপলস লিবারেশন আর্মি যে ধরনের ডুবোজাহাজ ব্যবহার করেছে, তা দেখেই তাদের এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে। সেই সঙ্গেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেন্টাগনের এক শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, চিনের এই সিদ্ধান্তের পিছনে একটা বড় কারণ হল, তাদের তাইওয়ানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন নীতি।
আমেরিকার দাবি, বেজিং বরাবরই গোটা বিশ্বকে বলে এসেছে যে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার বেশি পরমাণু অস্ত্র তারা বানাবে না। অথচ গত বছর থেকে তাদের অস্ত্র ভান্ডারে বিপুল সংখ্যক পরমাণু অস্ত্র যোগ হতে শুরু করেছে। পেন্টাগনের কিছু আধিকারিকের দাবি, এই সংখ্যাটা আদৌ চমকে দেওয়ার মতো নয়। কারণ গত বছরই তাঁদের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, আগামী ১০-১২ বছরের মধ্যে চিন অন্তত এক হাজার পরমাণু অস্ত্র নিজেদের দখলে রাখতে চলেছে। আমেরিকার এই রিপোর্ট নিয়ে চিনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি অবশ্য। তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডারের বক্তব্য, গোটা বিষয়টি নিয়ে চিনের অস্বচ্ছতাই তাদের উদ্বেগের মূল কারণ। তাঁর কথায়, ‘‘চিন্তার বিষয় হল, চিন যত বেশি পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার ঘটাবে, দক্ষিণ চিন সাগরের মতো অতি স্পর্শকাতর এলাকায় স্থিতিশীলতা তত কমবে। এ নিয়ে অস্বচ্ছ তথ্যও আমাদের উদ্বেগের বড় কারণ।
ওই একই রিপোর্টের একটি অংশে আবার দাবি করা হয়েছে যে, ভারত-চিন সম্পর্কের মধ্যে আমেরিকাকে নাক গলাতে নিষেধ করেছিল বেজিং। বছর দুই আগে ভারত-চিন সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দু’দেশের মধ্যে যে উত্তেজনার আবহ ও সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে আমেরিকান শীর্ষ আধিকারিকদের হস্তক্ষেপ করতে বারণ করে দেয় চিনের শি জিনপিং সরকার। গালওয়ান সীমান্তে দু’দেশের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষও তেমন বড় কোনও ঘটনা নয় বলেও আমেরিকান আধিকারিকদের জানিয়েছিলেন চিনা আধিকারিকেরা।