প্রাণঘাতী ভাইরাস রোগ ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইবোলার বিস্তার রোধ করার জন্য দেশটির সরকার মুবেন্দে ও কাসান্দা জেলায় ২১ দিনের কোয়ারেন্টাইন জারি করেছে। এই রোগের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জেলাগুলো। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োয়েরি মুসেভেনি স্বাক্ষরিত এক সরকারি নোটিশের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় ভয়েস অব আমেরিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার মতো ইবোলাও একটি মারণ রোগ। কোভিডের মতো এই রোগটি বাদুড়, বানর বা শুকরের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়। যাইহোক, এটি একটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ নয় বা এটি শ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায় না।
ইবোলার পুরো নাম ইবোলা হেমোরাজিক ফেভার (ইএইচভি)। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটির নাম ইবোলা ভাইরাস। এই রোগটি ছড়ায় মূলত আক্রান্ত প্রাণী ও মানুষের দেহ থেকে নিঃসৃত তরলজাতীয় পদার্থ, অর্থাৎ রক্ত, লালা, বীর্য, ঘাম, মূত্র প্রভৃতির সংস্পর্শে এলে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত পশুর মাংস কাঁচা বা আধা সিদ্ধ করে খেলেও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মানুষ ও বানরজাতীয় প্রাণী ও শুকর সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয়। ইবোলা রোগীদের মৃত্যুর হার বেশি প্রায় ৮৩ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ। ফলাহারী বাদুড় এই রোগের প্রধান বাহক।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে, বাদুড় এই রোগে আক্রান্ত হয় না, তবে ভাইরাসটি মূলত বাদুড় দ্বারা ছড়ায়। আফ্রিকার যেসব অঞ্চলে বাদুড়ের মাংস খাওয়ার প্রচলন আছে, সেসব দেশে এই রোগটি ছড়ানোর হার অনেক বেশি। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে অন্য কোনো দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়নি।
ইবোলায় আক্রান্ত হলে প্রথম অবস্থায় রোগীর দেহে জ্বর, গলা ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, মাথা ধরা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। তারপর এক পর্যায়ে রোগীর ঘন ঘন ডায়রিয়া ও বমি হতে থাকে এবং এর সাথে শরীর থেকে রক্তবের হতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই এক সময় মৃত্যু হয় রোগীর।
২০১৩ সালে মধ্য আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোতে প্রথম ইবোলার প্রাদুর্ভাব ঘটে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছিল সেই মহামারি। দেশটির সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দুই বছরের সেই মহামারিতে ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৬১৬ জন এবং তাদের মধ্যে ১১ হাজার ৩১০ জন মারা গিয়েছিলেন।
উগান্ডায় ইবোলার সাম্প্রতিকতম প্রাদুর্ভাব ঘটে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। তারপর থেকে গত দুইমাসে দেশটিতে ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪১ জন এবং তাদের মধ্যে ৫৫ জন ইতোমধ্যেই মারা গেছেন। আক্রান্ত ও মৃত সকলেই মুবেন্দে ও কাসান্দা জেলার বাসিন্দা।
নোটিশে বলা হয়েছে, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ইবোলার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও পরিস্থিতি এখনও সংকটজনক।