২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:০২:২০ পূর্বাহ্ন


খেরসনের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে, রুশ জেনারেলের স্বীকারোক্তি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২২
খেরসনের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে, রুশ জেনারেলের স্বীকারোক্তি জেনারেল সুরুভিকিন। ফাইল ফটো


ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর কমান্ডার স্বীকার করেছেন, খেরসনে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল সের্গেই সুরুভিকিন বলেছেন, ইউক্রেনের সৈন্যদের ছোঁড়া হিমার্স রকেট শহরের অবকাঠামো আর বাড়িঘরে আঘাত করছে।

তিনি বলেছেন, ''খেরসনের বাসিন্দাদের নিরাপদে শহর ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সব রকম সহায়তা করবে রাশিয়ার সেনা সদস্যরা।''

জেনারেল সুরুভিকিন বলেছেন, ''বিশেষ সামরিক অভিযানের পুরো এলাকাজুড়েই উত্তেজনা রয়েছে।''

তার এই বক্তব্য ইউক্রেনে হামলা চালানো রাশিয়ার সৈন্যদের সংকটে থাকার বিরল এক স্বীকারোক্তি। এর আগে স্থানীয় শীর্ষ একজন কর্মকর্তাও এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। রুশ সমর্থিত আঞ্চলিক কর্মকর্তা কিরিল স্তেরেমোসভ এর আগে খেরসনের বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, খুব তাড়াতাড়ি ইউক্রেনের সৈন্যরা খেরসনে হামলা চালানো শুরু করবে।

''আমার কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনুন-আমি পরামর্শ দিচ্ছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহর ছেড়ে চলে যান,'' টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে তিনি এই বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দানিয়েপার নদীর পশ্চিম তীরে যারা রয়েছেন, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে হামলা শুরু পর খেরসন শহরটি প্রথম দখল করেছিল রাশিয়া। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে আশেপাশের এলাকা পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে ইউক্রেনের বাহিনী। তারা এখন দানিয়েপার নদীর দক্ষিণে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। ফলে সেখানে থাকা রাশিয়ার সৈন্যদের ফাঁদে আটকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। হামলা শুরুর পর রাশিয়ার দখলে নেয়া ইউক্রেনের একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী খেরসেন। ক্রেমলিন এখন দাবী করছে, খেরসেন এবং ইউক্রেনের অন্য তিনটি এলাকা রাশিয়ার অংশ হয়ে গেছে- যে দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে আঞ্চলিক সম্প্রদায়।


রাশিয়ার হামলার পর সহস্রাধিক শহরে ব্ল্যাকআউট

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলার পর ইউক্রেনের সহস্রাধিক শহর ও গ্রাম বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গত আট দিনে রাশিয়ার হামলায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি মঙ্গলবারের হামলার পর কিয়েভের কিছু অংশ বিদ্যুৎ এবং পানিবিহীন রয়েছে।

ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগের মুখপাত্র ওলেকসান্দির খোরুনযায়ি বলেছেন, অক্টোবরের সাত থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় চালানো হামলায় ১১টি অঞ্চলের প্রায় চার হাজার বসতি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে।

''বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ১১৬২টি বসতি বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে,'' তিনি বলছেন।


নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে বিস্ফোরণ

রাশিয়া থেকে জার্মানিতে সমুদ্র তলদেশের যে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, সেই নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের অন্তত ৫০ মিটার (১৬৪ ফিট) গত মাসের একটি বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেছে। নরওয়ের একটি রোবট কোম্পানির তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই স্থানটি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ওই ভিডিও প্রকাশ করেছে সুইডেনের সংবাদ মাধ্যম এক্সপ্রেসেন। ডেনমার্কের পুলিশ ধারণা করছে, শক্তিশালী বিস্ফোরণে পাইপলাইনে চারটি গর্তের তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে কাছাকাছি থাকা নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে অন্তর্ঘাতের ধারণা করা হলেও কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে বা কারা এর পেছনে রয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। বাল্টিক সাগরের নীচ দিয়ে পাইপলাইনে বিস্ফোরণের কারণে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

প্রথমে ওই বিস্ফোরণের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছিলেন পশ্চিমা নেতারা। যদিও পরবর্তীতে সেই অবস্থান থেকে তারা সরে আসেন। 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ''সাধারণ যুক্তিতে বলা যায়, পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা রাশিয়ার স্বার্থের সঙ্গে যায় না''।

কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাকে একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।


ইরানের ড্রোন সরবরাহ নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন: যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বিস্ফোরণের ক্ষমতাবাহী ইরানের ড্রোন রাশিয়ার কাছে সরবরাহ করার মানে হচ্ছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন। সোমবার কিয়েভে একাধিক 'কামিকাজি' ড্রোনের হামলা চালানো হয়েছে। রাশিয়া ওই হামলা চালালেও এসব ড্রোন ইরানে তৈরি বলে বিশ্বাস করা হয়। এসব ড্রোন ইরানে তৈরি শাহিদ-১৩৬ বলে শনাক্ত করেছে ইউক্রেন, যাকে কামিকাজি ড্রোন বলে বর্ণনা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের যে ফাইটার বিমানের যোদ্ধারা আত্মঘাতী হামলা চালাতেন, তাদের নামের সঙ্গেও মিল রেখে এই নামকরণ। ফরাসি ও ব্রিটিশ মিত্রদের সঙ্গে বিশ্লেষণের পর যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে, ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তার লঙ্ঘন। ইরানের পারমাণবিক চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ওই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, বেশ কিছু সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা ভিদান্ত প্যাটেল বলেছেন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতাকে সারা বিশ্ব একটি হুমকি হিসাবে দেখবে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে এই দুই দেশ।

''ইরানের সাথে যারা ব্যবসা করবেন, তাদের যদি ইউএভি অথবা ব্যালেস্টিক মিসাইল কর্মসূচীর সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা থাকে, অথবা ইরান থেকে রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহে কোনরকম সংযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের খুব সতর্ক হওয়া উচিত এবং বুঝেশুনে কাজ করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করতে দ্বিধা করবে না,'' তিনি বলেছেন।