১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৪:১২:৪৭ অপরাহ্ন


জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৪-২০২৫
জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা


জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িত থাকা এবং এতে প্ররোচনার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪০৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তা ও মিডিয়ার কতিপয় কর্মকর্তারও নাম রয়েছে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের আগ মুহূর্তে মিরপুরে মাহফুজুল আলম শ্রাবণ নামে ২১ বছর বয়সী এক তরুণকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা করেন। এজাহারে অভিযুক্তদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সবার সম্পৃক্ততা ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্রাবণের বাবার নাম মোশাররফ হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার দোগাছী এলাকায়। তিনি মিরপুরে বসবাস করতেন। গত ৫ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিলে আসামিরা তাকে মিরপুর থানার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শ্রাবণের শরীরে একাধিক গুলি এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে যায়। লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। শ্রাবণের প্রাণ হারানোর নয় মাসের মাথায় গত ২০ এপ্রিল তার ভাই আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন।  

রোববার (২৭ এপ্রিল) একটি সূত্র এই মামলার তথ্য জানায়। 

মিরপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে মিরপুর থানা মামলাটি নথিভুক্ত করে। বর্তমানে মামলাটি মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ রোমন তদন্ত করছেন। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মিরপুর থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন।

নথি থেকে জানা যায়, মামলার আসামির সংখ্যা ৪০৮ জন। যাদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন পর্যায়ে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

এদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও রয়েছেন তার মন্ত্রিসভার সদস্য ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জমান খান কামাল, ড. হাছান মাহমুদ, নসরুল হামিদ বিপু, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এছাড়া সাবেক তিন আইজিপি, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ, একেএম শহীদুল হক, হাবিবুর রহমান, আছাদুজ্জামান মিয়া, বিপ্লব কুমার সরকার, হারুনুর রশিদ।

হাসিনার আমলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ঢাকার মেয়র, দুদক চেয়ারম্যান, আমলা ও ব্যাংক মালিকের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া জন্য আর্থিক সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। যাদের মধ্যে নাম রয়েছে আবদুর রউফ তালুকদার, কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, নজরুল ইসলাম মজুমদার, এন আই খান, ফজলে নূর তাপস, নুর আলী, চৌধুরী নাফিজ সরাফত, এস আলম।  

মামলায় কিছু সাংবাদিক ও মিডিয়া সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কমকর্তাকে বিগত সরকারের হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার মাধ্যমে গণহত্যার সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, নাঈমুল ইসলাম খান, মোর্শেদ আলম, ফারজানা রূপা, আরিফ হাসান, মাসুদ ভাট্টি, মোরশেদ আলম প্রমুখ।

চার শতাধিক আসামির তালিকায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মধ্যে আসাদুজ্জমান নুর এবং এশিয়াটিক গ্রুপের গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও অভিনেতা ইরেশ যাকেরকে আসামি করা হয়েছে।  

মামলার বিষয়ে মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজিব হোসেন বলেন, এই মামলাটি আদালতের নির্দেশে মিরপুর থানা নথিভুক্ত করেছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ওসি নিজেই। তবে তিনি বর্তমানে অসুস্থ। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। ওসি স্যার থানায় এলে কথা বলতে পারবেন।