দীর্ঘ একটি হাদিস। এর একটি অংশে জিবরিল আলাইহিস সালাম আগন্তুকের বেশে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কি? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ তাআলাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে। তাঁর ফেরেশতা, তাঁর আসমানি কিতাব, তাঁর রাসুলগণ ও আখেরাতকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে। আর এটাও বিশ্বাস করবে যে, পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটে, আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটে, চাই তা ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক। এটাই ঈমান।’ (মুসলিম)
এ অংশটুকু হাদিসে জিবরিল নামে দীর্ঘ একটি হাদিসের অংশ। একদিন হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম মানুষের রূপ ধারণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে অনেক প্রশ্ন করেন। তন্মধ্যে ঈমান কী? এ প্রশ্নটিও ছিলো।
হাদিসের ব্যাখ্যা: ঈমানের আসল অর্থ হলো- কারো ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। সে কারণে তার কথাকে সত্য বলে মেনে নেওয়া। মানুষ তখনই কারো কথাকে সত্য বলে গ্রহণ করে, যখন তার সত্যবাদিতা সম্পর্কে অটল বিশ্বাস রাখে। বিশ্বাস ও আস্থাই হলো ঈমানের মূল কথা। আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুলগণের মাধ্যমে যা যা এসেছে, তার সবকটিকে সত্য বলে গ্রহণ করা মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য। এ হাদিসে ঈমানের সেই মৌলিক বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। যে বিষয়গুলোর ওপর ঈমান আনা আবশ্যক। আর তাহলো-
১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহর প্রতি ঈমানে অর্থ হলো তিনি অনাদি ও অনন্তকাল ধরে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তিনিই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টিজগতের রব। সৃষ্টি ও শাসন পরিচালনায় তার কোনো শরিক নেই। তিনি সব রকমের ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তিনি যাবতীয় সদগুণাবলীর অধিকারী এবং সব কল্যাণ ও মহত্বের উৎস।
২. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহর কাজে ও প্রশংসায় নিয়োজিত ফেরেশতা যে আছে, তাদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং এ বিষয়টি স্বীকার করা যে, তারা অত্যন্ত পবিত্র ও নিষ্পাপ। ফেরেশতারা কখনও আল্লাহর হুকুম অমান্য করে না। সব সময় আল্লাহর ইবাদত করেন। আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য তারা সব সময় প্রস্তুত থাকেন। দুনিয়ার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য তারা দোয়া করতে থাকেন।
৩. আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস করা: আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে যত নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন এসব যুগে যুগে আদেশ-নিষেধ ও উপদেশ দিয়ে যেসব গ্রন্থ ও নির্দেশাবলী পাঠিয়েছেন; সেসব গ্রন্থকে সত্য বলে বিশ্বাস স্থাপন করা। এসব আসমানি কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ গ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। কোরআন নাজিল করার পর আগের সব আসমানি কিতাবের বিধান রহিত করা হয়েছে। কোরআনুল কারিমের ওপর এ মর্মে বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এটি ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত। এ কিতাব ছাড়া অন্য কোনো কিতাব নেই; যার দ্বারা মহান আল্লাহ তাআলার কাছে পৌছা যায়।
৪. রাসুলগণের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা: নবি-রাসুলগণের ওপর ঈমান আনার তাৎপর্য হলো এই যে, যতজন নবি-রাসুল আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন; তাদের সবাইকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া। তাঁরা সবাই ছিলেন সত্যবাদী। এ বিশ্বাসও করা যে, তাঁরা কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই অবিকল আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সর্বশেষ নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণেই রয়েছে মানুষের মুক্তি ও পরিত্রাণ।
৫. আখেরাতের ওপর ঈমান: আখেরাত এমন একটি দিন। যে দিনটি আসবে অবধারিত। যেদিন সব মানুষের কৃতকর্মের বিচার অনুষ্ঠিত হবে। যার কাজ ভালো হবে সে মুক্তি পাবে এবং পুরস্কৃত হবে। আর আমল খারাপ হবে সেদিন সে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে।
৬. তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা: এর অর্থ এই মর্মে বিশ্বাস স্থাপন করা যে, দুনিয়াতে যা কিছু হচ্ছে বা ঘটবে; তা কেবল আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হচ্ছে বা হবে। এখানে শুধু তারই হুকুম চলে। এমন নয় যে, আল্লারহ এক রকম চান আর বিশ্বজগত অন্যভাবে চলছে। বরং সব কিছুই আল্লাহর হুকুমে পরিচালিত হচ্ছে। তকদিরের ভালো মন্দ সব কিছুর আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এ বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলো ওপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করার মাধ্যমে নিজেদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।